কেকা মিত্র
বিগত তিন বছর ধরে নাট্যদল সবুজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র দূর্গা পূজা ও কালী পূজাকে কেন্দ্র করে এক নতুন ধরনের থিয়েটারী চর্চা করে আসছে। পুজার থিমের সাথে মিলিয়ে লাইভ পারফরমেন্স তৈরী করা ও তা পুজার জুড়ে শো করা। বর্তমানে এই কাজ অনেক নাট্যদল করলেও , তিন বছর আগে পুজার মুল থিম ডিজাইনার অনির্বাণ দাসের অনুপ্রেরণায় হাতিবাগান নবীন পল্লীর ‘আবোল তাবোল’ পুজার লাইভ শো সারা ফেলে সারা কলকাতায়। এর পর পরবর্তীতে অনেক নাট্যদল সবুজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের এই কাজ দেখে চেষ্টা করে এমন কাজ করতে। এই তিন বছরে দশটি পুজায় লাইভ পারফরমেন্স ডিজাইন ও অভিনয় করে সবুজ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুজা হাতিবাগান নবীন পল্লী, দমদম পার্ক তরুণ সংঘ (দু বছর পরপর), চক্রবেড়িয়া সার্বজনীন (দূ বছর পরপর), দক্ষীনদারী ইউথ্, কাশীবোস লেন , গিরীশ পার্ক ফাইভস্টার স্পোর্টিং ক্লাব এবং বরানগর হাওয়া সকাল।

এই কাজ গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ বড়ো কাজেই সবুজ শিল্পী অনির্বাণ দাসের সাথে মিলে কাজ গুলো করেছে। এছাড়া মলয়-শুভময়, মানস দাসের সাথেও কাজ করেছে। সবুজের নির্দেশক রাজেশ দেবনাথের মতে এই নতুন ধরনের থিয়েটারী যাত্রা যার ভাবনায় প্রথম শুরু সেই অনির্বাণ দাসের সাথে আমাদের দল কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং আমরা কৃতজ্ঞ তার প্রতি। এই বছর সবুজ সবচেয়ে বড়ো কাজ করে ফেলে, মোট ২১৬ জন অভিনেতা – শিল্পী নিয়ে কাজ করে সবুজ। রাজেশ দেবনাথের কথায় সবুজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সমস্ত শিল্পী ঝাঁপিয়ে না পড়লে এতো বড়ো কর্মযজ্ঞ করা সম্ভব ছিল না। এবছর কলকাতার বেশ কিছু দূর্গা পূজা ‘মাস আর্ট’ পায়; সবুজ যে-কটা পুজা করেছে তার সবগুলোই ‘মাস আর্টের ‘ অন্তর্ভুক্ত – তাই মূল পূজার ১১দিন আগেই পুজার পারফরমেন্স শুরু হয়। প্রায় ১৫ দিনের টানা কাজ এত শিল্পী নিয়ে সবুজ প্রথম বার করে ও সফল হয়। রাজেশের মতে -যেহেতু সবুজের এই কাজের মুল টিমটি আছে তিন বছর ধরেই তাই তারা সামলাতে জানে। আর শুধু শিল্পী জোগার তো নয়, তাদের রিহার্সাল দেওয়া, পোশাক কেনা, কিছু পোশাক বানানো, প্রপ্স বানানো, মেক-আপ সব নিয়ে বিরাট পরিশ্রম। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ‘মাস আর্ট’ শুরু হয়; তারও দু মাস আগের থেকে দলের শো, রিহার্সাল ও অন্যান্য কাজ সামলে ।
পারোমিতা ঘোষ, অভিষেক গুহ, নবমিতা ঘোষ প্রতি বছরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে এই কাজে। এ বছর এদের সাথে যোগ দেয় রোমানা দে এবং গৌরব সরকার। দক্ষীনদারী ইউথ্ , কাশীবোস লেন এবং দমদম পার্ক তরুণ সংঘ তিন দূর্গা পূজা সামলায় আর্টিস্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে অমিয় দে, অভিষেক গুহ, সম্পদ পারাল, অমিতাভ ব্যানার্জি, অদ্রীজ বাসু, শুভব্রত আচার্য্য, সুমন সিংহ প্রমুখ। হাতিবাগান নবীন পল্লীর ‘আবোল তাবোল’ পুজার পর এবছরও দক্ষিনদারী ইউথ্ এর থিম মিউজিকের দ্বায়িত্বে নবমিতা ঘোষ ছিলেন, সেই দ্বায়িত্ব সামলেও সবুজের এই কাজে সঁপে দেন নিজেকে। দূর্গা পূজার ১৫ দিনের কাজের পর কাজী পুজার থিমের সাথে কাজ বরানগর হাওয়া সকাল ক্লাবে। পার্ফরমেন্স এর কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ সামলেছে অভিষেক গুহ এবং সাথে রোমানা দে। এ বছরের সব কটা থিম ই একজন থিম শিল্পী অনির্বাণ দাসের সাথেই কোলাবোরেট করে সবুজ। হ্যাঁ এর বাইরে গতবছরের থিম পার্ফমেন্সের পর এ বছর জ্যান্ত দূর্গার সাথে সিঁদুর খেলা ডিজাইন করে সবুজ। রাজেশ দেবনাথের বক্তব্য আরও দুজন শিল্পী লাইভ পারফরমেন্স এর প্রস্তাব দেয় কিন্তু রাজি হইনি। ২১৬ জন অভিনেতা নিয়ে এতো বড়ো কাজের পর আরও কাজ নিতে ভয় পেয়েছিলাম। রাজেশের বক্তব্য পুজার সাথে থিয়েটার জুড়ে যাওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। থিয়েটারের ছেলে মেয়েরা পুজাকে কেন্দ্র করে কিছু রোজগার করতে পারছে অন্য কিছু না করে ও হাজার লক্ষ মানুষের কাছে থিয়েটার পৌঁছে দিচ্ছে, এর চেয়ে সাফল্য আর কোথায়। ফাইন আর্টস ও ভিজিউয়াল আর্টস এর মিলন উৎসবকে কেন্দ্র করে এটা আশা জনক অধ্যায় একটি। সবুজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাকি শিল্পীরা হিরক গাঙ্গুলী, সঙ্গীতা মজুমদার, হাসু ঘোষ, সুগত ঘোষ, রোহিত সিংহ, দীপ সোনার, সৌভিক মোদক, জীবানন্দ মন্ডল, সুস্মিতা প্রামাণিক, প্রেরনা, অর্পিতা, পূজা, সন্দীপ সাহা, সোনিয়া, সৃজনরা সমস্ত শিল্পীদের সাথে সফল করেছেন এই কাজ। সবুজ অপেক্ষায় আগামী বছরের জন্য।





