এনাদের দেখলে বা এনাদের নাম শুনলেই কেমন একটা ভয়, সংকোচ কাজ করে. অনেকে ভাবেন এনারা ভন্ড, কিন্তু সাধু আর নাগা সাধু এক নয়. এনাদের কারো কাছে কোনো দাবি থাকে না, লোকে যা দেয় তাই এনারা নেন. একজন সাধুকে নাগা সাধু হয়ে ওঠার জন্য দীর্ঘ ২০ বছর কঠিন পরীক্ষা পার করতে হয়.
আদিগুরু শঙ্করাচার্য এই নাগা সন্যাসীদের সৃষ্টি করেন, অতীতে বহুবার বিদেশি আক্রমনে ভারতবর্ষ আক্রান্ত হয়েছে, বহু সম্পদ লুঠ হয়েছে, হিন্দু মন্দির, হিন্দু ধর্ম আক্রান্ত হয়েছে বারবার, এই সংকট থেকে হিন্দু ধর্মকে রক্ষার জন্য তিনি সাধুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন. কঠোর তপস্যা, শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশিক্ষা প্রভৃতি. তিনি ভারতের চারকোনে চারটি পীঠ স্থাপন করেন, গোবর্ধন পীঠ, সারদা পীঠ, দ্বারকা পীঠ, ও জ্যোতির্মঠ পীঠ. এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন মঠ ও মন্দির রক্ষার জন্য হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে একত্রিত করে বিভিন্ন আখড়ার সৃষ্টি করেন. এই আখড়ায় একজন করে প্রধান থাকেন যিনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তিনিই বাকী সাধুদের কুম্ভমেলার, গঙ্গাসাগর মেলার তিথি নির্দেশ করেন.
এনারা সাধারণত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকেন, সারা বছর কোন হিমালয়ের বরফে ঢাকা অঞ্চল বা কোনও গুহাতে এনারা তপস্যায় মগ্ন থাকেন শুধু বিভিন্ন পূণ্যতিথিতে এনারা পূণ্যস্নানের উদ্দ্যেশ্যে নীচে নেমে আসেন. এনারা শিবের উপাসক. তাই এনারা গলায় রুদ্রাক্ষ ও গায়ে ছাইভস্ম মাখেন, এটিই তাদের একমাত্র আভূষণ.
শাস্ত্র বলছে, একজন সাধু দীর্ঘ কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে একজন নাগা সন্যাসী হতে পারেন. কাম, ক্রোধ, লোভ, অহংকার সব ত্যাগ করে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে হয়. যেকোনো ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষ যার বৈরাগ্য লাভের ইচ্ছা প্রবল তিনি নাগা সাধু হতে পারেন. কিন্তু তার আগে তাকে দীর্ঘ ২০ বছর পার করতে হয়. প্রথম ১২ বছর কঠোর প্রশিক্ষণ, এক বেলা খাবার খাওয়া, ভিক্ষা করে নিজের খাবার জোগাড়, আর না পেলে উপবাস করে থাকা, বস্ত্র ত্যাগ, তেল সাবান ত্যাগ, চুল দাড়ি নখ না কাটা, শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এমন খাবার ত্যাগ, এমনকি তাদের পুরুষাঙ্গও বিকল করে দেওয়া হয়, নিজের ও নিজের পরিবারের সকলের শ্রাদ্ধ ও পিন্ডদান করতে হয়, এর সাথেই চলে কঠিন অস্ত্র শিক্ষা, শারীরিক কসরত. এভাবেই তাকে প্রমাণ করতে হয় যে পার্থিব কামনা বাসনায় তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, তারপরই সে নাগা সন্যাসী হবার যোগ্যতা পায়. এইসব কারণে কুম্ভমেলায় স্নানের ক্ষেত্রে নাগা সাধুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়.
এনারা যুদ্ধ বিদ্যায় অসম্ভব পারদর্শী হলেও তারা অহিংসা, সত্য, ও ব্রহ্মচর্যে বিশ্বাসী. কিন্তু যখন নিজের ধর্ম ও দেশ বিপদে পড়ে তখন এনারা রুদ্র রূপ ধারণ করে অস্ত্র হাতে তুলে নেন. ১৭৫৭ সালে উন্মত্ত আফগান সেনা আহমেদ শাহ আবদালির নেতৃত্বে ভারত আক্রমণ করে ও সারা দেশ লুটপাট শুরু করে, প্রচুর হিন্দু পুরুষদের হত্যা, নারীদের অত্যাচার শুরু করে. এভাবেই তারা গোকুলে আক্রমণের পরিকল্পনা করে ও সমস্ত দেবদেবীর মন্দির ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে. এই অবস্থায় সেই বিশাল আফগান সেনার সম্মুখে মাত্র ৫০০০ নাগা সন্যাসী নিজের ধর্ম রক্ষায় অস্ত্র হাতে হর হর মহাদেব স্লোগান দিতে দিতে যুদ্ধে নামেন, ইতিহাসবিদদের মতে এক একজন নাগা সন্যাসী ১০ জন করে আফগান সেনা হত্যা করেছিল, তাদের সেই রুদ্ররূপ দেখে আহমেদ শাহ আবদালি অবশিষ্ট সৈন্য নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, এই যুদ্ধে বহু নাগা সন্যাসী মৃত্যুবরণ করেন. কিন্তু শেষ অবদি নিজের ধর্ম ও মাতৃভূমি রক্ষায় সমর্থ হন.