শঙ্কর দয়াল শর্মা ভারতের নবম রাষ্ট্রপতি।শঙ্কর দয়াল শর্মা ১৯১৮ সালের ১৯আগস্ট মধ্যপ্রদেশের ভোপালে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা খুশিলাল শর্মা এবং মা সুভদ্রা শর্মা।
তার উচ্চ শিক্ষা আগ্রার সেন্ট জনস কলেজে শুরু হয় এবং লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে তা অব্যাহত ছিল। তিনি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন এবং তিনি লিঙ্কনস ইন এবং হার্ভার্ড ল স্কুলেও পড়াশোনা করেন। শর্মা কেমব্রিজে আইন পড়াতেন। তিনি ১৯৪০ সালে লখনউতে তার আইনী অনুশীলন শুরু করেন এবং প্রায় একই সময়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভোপালের নবাব চেয়েছিলেন তাঁর রাজ্যকে ভারত থেকে পৃথক রাখবেন।নবাবের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন গড়ে তোলেন শঙ্কর দয়াল শর্মা।আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারন করে।শঙ্কর দয়াল শর্মাকে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জেল বন্দী করেন নবাব।জেলের ভেতরে থেকেও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যান শর্মা।আন্দোলনের চাপে ১৯৪৯ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের সাথে যুক্ত হয় ভোপাল।৮ মাস পরে জেল থেকে মুক্তি পান শঙ্কর দয়াল শর্মা।
১৯৫২ সালে ভোপালের মুখ্যমন্ত্রী হন শঙ্কর দয়াল শর্মা।সব চেয়ে কম বয়সে ভোপালের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি।এই সময়ে তাঁর উল্লেখ যোগ্য অবদানের মধ্যে জায়গীর প্রথার সমাপ্তি ঘটান।১৯৫৬ সাল অবধি তিনি ভোপালের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।এরপর রাজ্য গুলির পুনর্বিন্যাস হয়
শর্মা ১৯৫৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার সদস্য ছিলেন এবং সেই সময়কালে তিনি প্রায় ১১ বছর ধরে শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন।তাঁর উদ্যোগেই পাঠ্য বিষয় থেকে ধর্মের প্রভাব বিলুপ্ত হয় । এরপর তিনি জাতীয় অঙ্গনে চলে আসেন ।১৯৭১ সালে লোকসভার সদস্য হন । ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। . তিনি আবার ১৯৮০ সালে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮৭ সালে দেশের উপ রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে, শর্মা ১৯৮৪-৮৫ সাল অবধি অন্ধ্র প্রদেশ , ১৯৮৫-৮৬ সাল অবধি পাঞ্জাব এবং ১৯৮৬-৮৭ অবধি মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল পদে ছিলেন।তিনি অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্যপাল থাকার সময়ে ১৯৮৫ সালের ৩০ জুলাই খালিস্থানী জঙ্গীদের গুলিতে তাঁর একমাত্র মেয়ে গীতাঞ্জলী ও জামাতা কংগ্রেস সাংসদ ললিত মাকেনের মৃত্যু হয়।
১৯৯২ সালে দেশের নবম রাষ্ট্রপতি হন শঙ্কর দয়াল শর্মা।তিনি একমাত্র রাষ্ট্রপতি যার কার্যকালের সময়ে দেশ চার জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে।শর্মা তাঁর মেয়াদ কালে তিন জন প্রধানমন্ত্রীকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছিলেন।তার মেয়াদকালীন অটলবিহারী বাজপেয়ীর ১৩ দিনের সরকার এখনও অবধি দেশের সবচেয়ে কম সময়ের সরকার ।অটলবিহারী বাজপেয়ীর পদত্যাগের পর তিনি প্রথমে এইচ ডি দেবেগৌড়া ও পরে আই কে গুজরালকে প্রধানমন্ত্রীর শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আইনজীবি সমিতি আইনের প্রতি তাঁর অসামান্য দায়বদ্ধতা ও অসামান্য অবদানের জন্যে ” লিভিং লিজেন্ট অফ ল অয়োয়ার্ড অফ রেকগনিশান” সম্মানে ভুষিত করে।এছাড় দেশে বিদেশে প্রচুর সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি।১৯৯৯ সালে ২৬ ডিসেম্বর তাঁর প্রয়ানের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতী পড়ুয়াদের প্রতি বছর শঙ্কর দয়াল শর্মা স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
১৯৭০ সালে তিনি কোরানের উপরে একটি কবিতা লিখেছিলেন,যা ভারত ও পাকিস্থান দুই দেশের মুসলীম সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে প্রশংসা পেয়েছিলো।অত্যন্ত গুনী ও শ্রদ্ধেয় এই মানুষটিকে এখন সংবাদ পরিবার জানায় শতকোটি প্রণাম