Select Language

[gtranslate]
১২ই পৌষ, ১৪৩১ শুক্রবার ( ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ )

।। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীমায়ের দীক্ষাগুরু স্বামী পূর্ণানন্দ নাথ ।।

পিতা ক্ষুদিরামের মৃত্যুর পর সংসার চালানোর জন্য রামকুমার কলকাতায় ঝামাপুকুরে চতুষ্পাঠী খুললেন। তিন বৎসরের পরিশ্রমে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে সতেরো বছরের অনুজ গদাধরকে রামকুমার কলকাতায় নিয়ে এলেন। এর কিছুদিন পরেই কৈবর্ত্যবংশীয় রাণী রাসমণি কর্ত্তৃক দক্ষিণেশ্বরে মন্দিরে নব প্রতিষ্ঠিত কালী ও রাধাকান্ত মন্দিরে যখন গোঁড়া ব্রাহ্মণেরা পূজা করতে অস্বীকার করলেন, রামকুমার পূজা করতে স্বীকৃত হলেন। রামকুমার সেই সময় হইতে দক্ষিণেশ্বরে মন্দিরে কালীমাতার পূজারী নিযুক্ত হলেন।

রামকুমার দক্ষিণেশ্বরে আসিয়া অবধি আত্মীয়গণের ভরণপোষণ সম্বন্ধে অনেকটা নিশ্চিন্ত হলেও অন্য এক বিষয়ের জন্য মধ্যে মধ্যে বড় চিন্তিত হতেন। কারণ, দেখতেন, এখানে আসিয়া অবধি কনিষ্ঠের নির্জনপ্রিয়তা ও সংসার সম্বন্ধে কেমন একটা উদাসীন উদাসীন ভাব ! সংসারে যাহাতে উন্নতি হবে এরূপ কোন কাজেই যেন তার আঁট দেখতে পেতেন না। দেখতেন, বালক সকাল সন্ধ্যা যখন তখন একাকী মন্দির হতে দূরে গঙ্গাতীরে পদচারণ করছে, পঞ্চবটীমূলে স্থির হয়ে বসে আছে, অথবা পঞ্চবটীর চতুর্দিকে তখন যে জঙ্গলপূর্ণ স্থান ছিল তন্মধ্যে প্রবেশপূর্বক বহুক্ষণ পরে তথা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইতেছে। রামকুমার প্রথম প্রথম ভাবতেন, বালক বোধ হয় কামারপুকুরে মাতার নিকট ফিরিবার জন্য ব্যস্ত হয়েছে এবং ঐ বিষয় সদা সর্বদা চিন্তা করছে। কিন্তু দিনের পর দিন যাইলেও সে যখন গৃহে ফিরিবার কথা তাঁহাকে মুখ ফুটিয়া বলিল না এবং কখন কখন তাহাকে ঐ বিষয় জিজ্ঞাসা করিয়াও তিনি যখন উহা সত্য বলিয়া বুঝিতে পারলেন না, তখন তাহাকে বাড়ীতে ফিরিয়া পাঠাইবার কথা ছাড়িয়া দিলেন। ভাবিলেন, তাঁহার বয়স হইয়াছে, শরীরও দিন দিন অপটু হইয়া পড়িতেছে, কবে পরমায়ু ফুরাইবে কে বলিতে পারে ? – এ অবস্থায় আর সময় নষ্ট না করিয়া, তাঁহার অবর্তমানে বালক যাহাতে নিজের পায়ের উপর দাঁড়াইয়া দু’পয়সা উপার্জন করিয়া সংসারনির্বাহ করিতে পারে এমন ভাবে তাহাকে মানুষ করিয়া দিয়া যাওয়া একান্ত কর্তব্য।

রাণী রাসমণির জামাতা মথুরবাবু যখন বালককে দেবালয়ে নিযুক্ত করিবার অভিপ্রায়ে রামকুমারকে জিজ্ঞাসা করেন, তখন তিনি বিশেষ আনন্দিত হন এবং উহার কিছুকাল পরে যখন বালক মথুরবাবুর অনুরোধে প্রথমে বেশকারী ও পরে পূজকের পদে ব্রতী হল এবং দক্ষতার সহিত ঐ কার্যসকল সম্পন্ন করতে লাগল, তখন তিনি অনেকটা নিশ্চিন্ত হইয়া এখন হইতে তাহাকে চণ্ডীপাঠ, শ্রীশ্রীকালিকামাতা এবং অন্যান্য দেবদেবীর পূজা প্রভৃতি শিখাইতে লাগিলেন। গদাধর ঐরূপে দশকর্মান্বিত ব্রাহ্মণগণের যাহা শিক্ষা করা কর্তব্য, তাহা অচিরে শিখিয়া লইলেন।

শাক্ত দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে না এলে শক্তিপূজায় অধিকার হয় না। শাক্ত দীক্ষা না লইয়া দেবীপূজা প্রশস্ত নহে শুনিয়া শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হইবার সংকল্প স্থির করিলেন। স্বামী পূর্ণানন্দ নাথের পূর্বাশ্রমিক নাম ছিল কেনারাম ভট্টাচার্য্য। শ্রীযুক্ত কেনারাম ভট্টাচার্য্য নামক জনৈক প্রবীণ শক্তিসাধক তখন কলিকাতার বৈঠকখানা বাজারে বাস করতেন। দক্ষিণেশ্বরে রাণী রাসমণির দেবালয়ে তাঁর যাতায়াত ছিল এবং মথুরবাবু-প্রমুখ সকলের সহিত তাঁর পরিচয়ও ছিল। যারা তাঁকে চিনতেন, অনুরাগী সাধক বলিয়া তাঁকে তারা বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করতেন। গদাধরের অগ্রজ রামকুমারের সহিত ইনি পূর্ব পরিচিত ছিলেন। গদাধর নিজেই এঁর নিকট হইতে দীক্ষাগ্রহণ করিতে মনস্থ করিলেন।

দক্ষিণেশ্বর দেবালয়েই শুভদিনে গদাধরের শক্তিসাধনায় দীক্ষানুষ্ঠান সম্পন্ন হল। প্রবীণ শক্তিসাধক কেনারাম ভট্টাচার্য্য দীক্ষা দান করলেন। শক্তি-সাধক গুরু শিষ্য গদাধরের কর্ণে যে মুহূর্তে দীক্ষামন্ত্র দিলেন, সেই মুহূর্তেই ভাবাবেশে অভিভূত হলেন শিষ্য গদাধর। দীক্ষা নেওয়ার সাথে সাথে গদাধর পরমানন্দে চলে গেলেন। শিষ্য গদাধরের অসাধারণ ভাবভক্তি দর্শনে গুরু চমৎকৃত; মুগ্ধচিত্তে আশীর্বাদ করলেন — “তোমার ইষ্টলাভ হোক।”


এরপর জন্মাষ্টমীর সময় রাণী রাসমণির জামাতা মথুরবাবু ৺দেবীপূজার ভার গদাধরকে দিলেন ও ক্ষুদিরামের ভগিনী রামশীলার কন্যা হেমাঙ্গিনীর পুত্র হৃদয়রামকে ৺রাধাগােবিন্দজীর পূজক করলেন। পূর্ব হতেই হৃদয়রাম দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের সহিত বাস করছিলেন। এর কিছুদিন পরেই রামকুমারের মৃত্যু হয়।

শ্রীশ্রীমায়ের মন্ত্রদীক্ষা হয় দক্ষিণেশ্বরে থাকাকালীন, স্বামী পূর্ণানন্দ নাথের নিকট, যাঁর পূর্বাশ্রমিক নাম কেনারাম ভট্টাচার্য্য।

Related News

Also Read