প্রদীপ কুমার সিংহ :- মঙ্গলবার রথযাত্রার পুণ্যতিথিতে উড়িষ্যার পুরীর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বহু জগন্নাথ মন্দিরে রথের উৎসব পালিত হয়েছে নিষ্ঠার সঙ্গে। করোনা ভাইরাসের কারণে
বেশ কয়েবছর ভক্তসমাগম না হলেও ঐতিহ্য রক্ষার্থে পালিত হয়েছিলো রথযাত্রা। কলকাতায় ও তার আশেপাশে বহু প্রাচীন রথ রয়েছে, সেখানেও রীতিনীতি মেনে সকাল
থেকে মহাপ্রভুর আরাধনা করা হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বেশ কিছু জায়গা আজকের রথের দড়ি টানা হয়। বারুইপুর রায় চৌধুরী বাড়ির রথযাত্রা বঙ্গের খুব প্রাচীন এক রথযাত্রা। এ দিনও নিষ্ঠার সঙ্গে
পালিত হল জগন্নাথের রথ। জমিদার রাজবল্লভ রায় চৌধুরীর সময় থেকেই এই রথযাত্রার সূত্রপাত, যা আজও সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে।জানা যায়, আজ থেকে প্রায়
৩৫০ বছর আগে রাজবল্লভ চৌধুরী স্বপ্নাদেশে পেয়ে নিজের বাড়িতেই জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন।
এক সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও বেশ কিছুদিন এই বাড়িতেই এসে থেকেছিলেন। ‘দুর্গেশ নন্দিনী’ উপন্যাসের একটা বড় অংশ এই বাড়িতে বসে লেখা হয়েছিল বলেও কথিত আছে।
এবছর করোনা মহামারীর দাপট আর নেই তাই এ বছর সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে ঐতিহাসিক রথযাত্রা।এই রথকে কেন্দ্র করেই চৌধুরীদের রাস ময়দানে বসে বিরাট মেলা ।চলে একমাস ধরে ।
প্রচুর দোকানপাট । কি নেই সেই মেলায় । বিক্রি হয় হরেক জিনিসপত্র । বিশেষ করে খাবারের মধ্যে জিলিপি ও বাদামের দোকান বসে লাইন দিয়ে।
এছাড়া বিশেষ উল্লেখযোগ্য লোহার ও কাঠের তৈরি জিনিসপত্র ও গাছের দোকান । জগন্নাথ ধাম পুরি রথ যাত্রা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের সমাগম হয় জগন্নাথ ধামে।
সেই রকমই বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির রথ দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীরা ছুটে আসেন।
বারুইপুর পদ্মপুকুরে পরিচালনায় তাদের রথ বেরোয়।সেখানে অংশগ্রহণ করেন বাড়ির পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়কতা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিশিষ্ট অতিথিবর্গ।
এই রথ পদ্মপুর থেকে বেরিয়ে জুবি বটতলার আগে পেট্রোল পাম্প থেকে ঘুরে আবার বারুইপুর রেলগেট হয়ে বিশালক্ষী মন্দির পর্যন্ত যায়।প্রায় দু কিলোমিটার পথ বারইপুর রাজপথে অতিক্রম
করে। তারপর বিশালক্ষী তলায় মাসির বাড়িতে যায়।বারুইপুর মহাপ্রভু তলা থেকে একটি রথযাত্রা বেরোয় দুপুরে সেটি বারুইপুর পুরাতন বাজার হয়ে ভট্টাচার্যিপাড়া রবীন্দ্র ভবনের পিছনে মাসির
বাড়িতে আসে জগন্নাথ সপরিবারে। এখানে অগণিত মানুষ সেই রথের দড়ি টানে।
