Select Language

[gtranslate]
১২ই পৌষ, ১৪৩১ শুক্রবার ( ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ )

সাঁঝবেলা

নবনীতা বোস দাস :-সাঁঝবেলা

” মা ” ঠ্যাং ছড়িয়ে সিঙ্গেল খাটে চারটে বালিশ হেলান দিয়ে বসে আছেন……
সন্ধ্যের মরা আলো ধীরে ধীরে ঘন হচ্ছে… বড় ছেলে চয়ন এসে ঘরে লাইট জ্বালিয়ে দেয়…

।। কে রে… ওওও চানু!!! বৌ গুলান কই রে….চা দেওনের নাম নাই….সব বাড়ি শাঁখ বাজতিসে….আমার বাড়ি সাড়া শব্দ নাই….

চয়ন দরজার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে ষড়যন্ত্র মূলক ভঙ্গিতে মায়ের কোল ঘেঁষে গিয়ে বসে….”তোমার তিন বৌ ঠাকুর ঘরের সামনে দাঁড়ায় তোমারে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়া আসার বুদ্ধি পাকাইতেছে”

। । হায় কপাল!!!

বাবার ফটোর দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়ায়…. “দ্যাখছো তোমার বৌদের কান্ড, তুমি আমারে ওগো ভরসায় থুইয়া গ্যাছো!! হায় হায়….চানু ছুটো টাও আছে না!! “

।। ছুটো টা শাঁখ হাতে ঠাকুরের সামনে বইয়া আছে…বড় গুলানের কথা গিলতাছে….

।।আর আমার বড়বৌমা!!! স্যাও আছে!!!

।। হঅ….তুমি ক্যান ওগো পিছনে ধুয়া দাও….

।। চা…নু রে, তোরা ভাইরা কিছু কবি না!!! বৌ গো কথায় পোঁ ধরবি???

।। কি কমু মা বৌ গুলান জোট বানছে….মেজো তো জানো বৌয়ের কথায় ওঠে বসে…আর সেজো বৌয়ের দাদা পুলিশ…. তায় সেজোর সরকারি চাকরি ও কিছু কইবো না..

।। আর তুই!!! তুই কিছু কবি না বাপ…

।। আমি কি কমু মা…আমার কয়ডা টাহা বেতন কওতো?? তোমার এখন কত খরচ……..দুধ,ছানা,ফল,স্যুপ,অসুধ, ডাক্তার, নিত্য চেকআপ…..আমি একা কি কি কইরা পারুম….. কিন্তু তুমি বৃদ্ধাশ্রম গেলে আমি বাঁচুম না মা…

বাকি দুই ভাই আর চার বৌ দরজার আড়াল থেকে রগড় টা দেখছে উঁকি দিয়ে….

।। আমি এখন কি করুম!!

।। বৌদের সাথে ভালো কইরা কথা কবা…পটাইয়া থুবা…

।। শোন ওই ছোট টার পোলা আদি ডাঃ হওনের পর থিকা খুব দেমাক বাড়ছে বুজছোস…ওই আদি টা সারাদিন বুদ্ধি দিতাসে…ওহন খাইবা…তহন শুইবা…পাজির পাঝাড়া….

এবার মেজো আর সেজো ছেলে গুটি গুটি পায়ে ঢোকে মাযের ঘরে…..বড় বৌ সবার জন্য চা, জলখাবার দিয়ে যায়….

ছেলেদের মন খারাপ….মাথা নিচু….

“মার ” আরও মাথা গরম হয়ে যায় “প্রথম থিকা কইছি বৌ গো ওতো লাই দিছ্ না,মাথায় তুলছ্ না….তহন কথা শুনছ্ নাই অহন মুখ লটকাইয়া কি হইবো….হ্যায় ভগবান এও আছিলো কপালে….শেষ বয়সে স্বামীর ভিটা মাটি ছাইড়া !!!! আমি মরলে যাবি তো!!!😥… নাকি ডোম চামারে নিয়া ভাগাড়ে ফেলবো আর শিয়াল কুকুরে…..

তিন ছেলে মা কে জড়িয়ে ধরে…. ” মা এই কথা বইলো না “

” কমু না তো কি করুম….চার চারটা পোলা যার…ছুটটা নয় মরছে…তোরা তো বাইচ্চা আছস্….যুথিরে খবর দে…আমি যুথির কাছে যামুগা”

।। যুথির সাথে তোমার বৌমারা আগেই কথা কইছে…..তোমারে নিয়া যাইতে কইছে…

বড় ছেলের কথায় খুব উৎসাহ দেখান মা…..” কি কয় যুথি?? নিয়া যাব আমারে!! “

এবার মেজো ভাই নয়ন মাকে বোঝায় ” না মা… দিদি ছোট ফ্ল্যাটে থাকে,ছেলের এবার বিয়ে দেবে, মেয়ে, জামাই আসে মাঝে মাঝে…..তুমি কোথায় থাকবা…বলছে বৌদি দের…তোমরা যা ভালো বুঝবা করো…

।। কিইইইই….এত বড় সাহস!!! সারাক্ষন আইস্যা বৌ গো নামে কুষ্টি কাটবো এখন বৌরা যা ভালো বুঝবো…হ্যা রে নয়ন আর কুনো বুদ্ধি নাই??

সেজো ছেলে কমল গম্ভীর হয়ে যায়…”অনেক বুঝিয়েছি তোমার বৌমাদের….এখন বেশি বললে ওরা আমাদের ডিভোর্স দেবে বলছে…সবার ছেলেরা দাঁড়িয়ে গেছে আমাদের আর দরকার নেই…

।। কি বাড় বাড়ছে বৌ গুলা…আমারে ঘর ছাড়া করবো..আমি পুলিশে যামু…

নয়ন অনেক চিন্তা করে ” না মা…পুলিশে গিয়ে কাজ হবে বলে মনে হয় না… এত এত মা বাবাকে যে ছেলে মেয়ে রা বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে তাহলে তো সব বাবা মাই পুলিশে যেতো…

।। তাইলে তোরা কি কছ্!!

তিন ভাই গভীর শলাপরামর্শ করে মায়ের সামনে…..সে অনেক বিষয়…..

নয়ন মাকে বোঝায় “দেখো আমাদের ডিভোর্স দিলে দিক… বৌ গেলে যাক গিয়া…কিন্তু ছানা পোনা গুলোকে ছেড়ে তো থাকতে পারবো না……তার থেকে এখন ওদের ছেলেদের বিয়ে হবে,নতুন বৌ আসবে তুমি যদি এমন খিটির পিটির করো….. ওরা মানবে না…তার থেকে যেমন বলে যেমন চলে চলতে দাও….তোমাকে তো ঠিকঠাক সেবা যত্ন করে আর ওদের ও বয়েস হয়েছে অতো নিয়ম মাফিক পারে না…
আর আদি ডাঃ হয়েছে তোমার ভালোর জন্যই তো বলে, বাবাও তো তোমাকে এই করো না সেই করো না বলতো…. একটু নরম হও….আমরা ভাইরা কই যাই বলোতো??

বড় ছেলে চয়ন একটু রাগ ও হয় ” তুমি বৌ দের খুব দেমাক দেখাও বর ডাঃ ছিলো বইলা”….

।। ও তো বৌ গুলারে একটু টাইট দেওনের লাইগ্যা….

।। আর তোমার টাইট দেওন লাগবো না…উল্টে ওরাই তোমারে টাইট দিয়া দিবো আনে….আর তুমি বাড়ি না থাকলে আমরাও টাইট হয়া যাব আনে….একটু সামলাই সুমলায় চলো…

ছেলেরা মাকে ভজিয়ে ভাজিয়ে বাইরে এসে দেখে চার বৌ সিঁড়ি র গোড়ায় রেজাল্টের আশায় দাঁড়িয়ে… …

।। হ্যাঁ…. আমরা বুঝিয়ে ছি….

বৌ রা — “কি মনে হুয় ডোজে কাজ হয়েছে??

।। ওই ডোজ পর্যন্ত ই হ্যাঁ… ভুলেও মা কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর মতলব করো না….

বৌরা হেসে ফেলে ” বালাই ষাট…..ওই ঘর, ওই খাট আলো করে উনি একশো বছর বাঁচুন…….
তবে কিনা তোমাদের পূজনীয়া মা কে একটু নমনীয়া করতে না পারলে আমাদের আদরনিয়া বৌমারা যে আমাদের 498 দেখাবে!!! তখন তো আমাদেরই বৃদ্ধাশ্রম যেতে হবে…..তাই ডাঃ আদি এই ডোজটা বরাদ্দ করেছেন…

ভাইরা চোখ চাওযা চাওয়ি করে ” মা ঠিকই বলে…এই আদি টাই যত নষ্টের গোড়া “….

সৌজন্যে – প্রতিলিপি

Related News

Also Read