রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রইংরেজের হাতে পরাধীন ভারতবাসীর মনে স্বাধীনতার সলতে জ্বালানোর রূপকার, ইংরেজের অত্যাচারে নুইয়ে পড়া এই দেশের মান মর্যাদা ফিরিয়ে আনাতে আট থেকে আশি সব বয়ষের বাসিন্দাদের মনে দৃঢ় সংকল্পের দীপ শিখা জ্বালিয়ে আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার কারিগর হিসাবে একজন মনীষীর নাম ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে তার নাম সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । আমাদের রাষ্ট্রগুরু।
১৮৪৮ সালের ১০ নভেম্বর কলকাতায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। তার বাবা দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ঐ যুগের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ইংল্যান্ডে চলে যান এবং ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস তথা আইসিএস পরীক্ষা পাশ করেন। ১৮৭১ সালে তিনি সিভিল সার্ভিসের কর্মজীবনে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিলেটে আসেন।তিনি তার নির্ধারিত দায়িত্ব সঠিকভাবে চালাতে পারেননি ও অগ্রসর হতে চান না – এ অজুহাতে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
তখন পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে দেশের মানুষ পাগল হয়ে উঠেছে । চারিদিকে অসন্তোষকে কাজে লাগাবার জন্য সুরেন্দ্রনাথ চেষ্টা করছিলেন । তাদের মনে স্বাধীনতাবােধ ও মুক্তিচেতনা জাগিয়ে তােলাই ছিল এই মহান বিপ্লবীর একমাত্র ধ্যান জ্ঞান
ভারতীয় বিধানসভার অন্যতম সদস্য সুরেন্দ্রনাথ ১৮৭৬ সালের ২৬ জুলাই সর্ব ভারতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত সভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৭৮ সাল থেকে তিনি দি বেঙ্গলি শিরোনামে একটি কাগজ সম্পাদনা শুরু করেন,যাতে দেশের সর্ব স্তরের মানুষদের মধ্যে স্বাধীনতার স্পৃহা আরো আবাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে
১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা পায় এবং এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্যও ভারত সভার সাথে মিল থাকায় ১৮৮৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের ২য় অধিবেশনে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিলেন ভারত সভাকে কংগ্রেসের সাথে একীভূত করা প্রয়োজন। তিনি নতুন প্রতিষ্ঠিত কংগ্রেসকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে দুইবার – ১৮৯৫ এবং ১৯০৭ সালে এর সভাপতিত্ব করেন।
১৯০৫ সালে সুরেন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন এবং স্বদেশী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এর ফলে হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষের মিধ্যে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশাপাশি উনবিংশ শতকে রাজা রামমোহন রায়ের নির্দেশিত সমাজ-ধর্ম বিষয়ক পুনর্জাগরণের আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে বিশেষভাবে সচেষ্ট ছিলেন।বিশেষত বিধবা বিবাহ, মেয়েদের অধিক বয়সে বিবাহ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেন।
১৯২৫ সালের ৬ আগষ্ট স্যার সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৭৭ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।
পরাধীন ভারতবাসীর মনে স্বাধীনতার স্পৃহা জাগিয়ে তোলার অন্যতম কারিগর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শতকোটি প্রনাম জানায় এখন সংবাদ পরিবার