স্বামী চেতনানন্দ :-স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের নির্দেশে পাশ্চাত্যে গিয়েছিলেন ।
মাদ্রাজে স্বামীজী একদিন স্বপ্নে দেখেন যে , ঠাকুর সমুদ্রের ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছেন এবং তাঁকেও যেতে ইঙ্গিত করে বলেছেনঃ ” যাও । ”
স্বপ্নটির যথার্থ যাচাই করবার জন্য স্বামীজী
কলকাতায় শরৎ মহারাজকে ( স্বামী সারদানন্দ )
লেখেনঃ “” দ্যাখ শরৎ , আমার একটা ” ভিসন ”
হয়েছে —— ঠাকুর আমাকে যেতে বলছেন । কিন্তু
আমি মনস্থির করতে পারছে না । তুই মাকে
( শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী ) সব বিষয় জানাবি এবং এ –
ব্যাপারে ওঁর কি মত জানাবি । “”
শরৎ মহারাজ চিঠিটা মাকে শোনান এবং
দুদিন পরে মা শরৎ মহারাজকে বলেনঃ “” নরেনকে
যেতে লিখে দাও । “”
বিবেকানন্দ প্রথম ভারতীয় সন্যাসী যিনি
শ্রীরামকৃষ্ণের ” মিশন ” বহন করে গেলেন পাশ্চাত্যে।
তিনি প্রায় ৫ বছর ( জুলাই ১৮৯৩ থেকে ডিসেম্বর
১৮৯৬ এবং জুলাই ১৮৯৯ থেকে নভেম্বর ১৯০০)
আমেরিকা ও ইউরোপে সর্বজনীন বেদান্তধর্ম প্রচার
করলেন ।
বেদান্ত ও শ্রীরামকৃষ্ণের বানী পৃথক নয় ।
স্বামীজী ঠাকুরকে “” বেদমূর্তি “” রূপে বর্ণনা করেছেন । ১৮৯৪ সালে স্বামীজী আমেরিকায়
বলেনঃ “””” পাশ্চাত্যের প্রতি আমার একটা বানী
আছে , যেমন প্রাচ্যের প্রতি বুদ্ধের একটা বাণী
ছিল । ” এ বাণী বেদান্তের বাণী —- শ্রীরামকৃষ্ণের
বাণী ।
স্বামীজীর পাশ্চাত্যে প্রচারকাহিনী মেরী
লুইস বার্ক ( সিস্টার গার্গী ) ” Swami Vivekananda in the West —— – New Discoveries ” গ্রন্থের ছয়টি খন্ডে বিশদভাবে
লিখেছেন । স্বামীজীকে ঠাকুরের ” মিশন ” বহন
করতে গিয়ে কত বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, অপমানিত ও নির্যাতিত হতে হয়েছে ,
অনাহারে – অনিদ্রায় কাটাতে হয়েছে । তাঁর অদ্ভুত
পোশাক দেখে লোকে ধাক্কা মেরেছে , ঢিল ছুঁড়েছে ;
এমনকি বিষ খাইয়ে মেরে ফেলবার চেষ্টা করা
হয়েছে ।
এখন পাশ্চাত্যে কত ভারতীয় যোগী , গুরু ,
” বাবা ” , ” মা ” , বিনাবাধায় ধর্মপ্রচার করছেন ;
কিন্তু এ — ব্যাপারে বিবেকানন্দ ছিলেন পথিকৃত ।
তিনি গোঁড়া খ্রীষ্টানদের দেশে ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতির স্বীকৃতির জন্য জীবনপণ করে খেটেছেন ।
তিনি ভাবীকালের রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের সন্যাসীদের
কর্মপ্রণালী সুগম করে দিয়ে গেছেন । বিখ্যাত অজ্ঞেয়বাদী রবার্ট ইঙ্গারসোল স্বামীজীকে বলেছিলেনঃ “”” পঞ্চাশ বছর আগে এদেশে প্রচার
করিতে আসিলে আপনাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলানো
হইত বা পুড়াইয়া মারা হইত । এমনকি আরও কিছু
পরে আসিলেও আপনাকে ঢিল মারিয়া গ্রাম হইতে
তাড়াইয়া দেওয়া হইত ।