অংকিতা ঘোষ
– কাকিমা, একটু শুনবেন?
– কে? ওমা, পাশের ফ্ল্যাটের নতুন বৌ যে! এসো, এসো ভেতরে এসো। বসো।
– না, না। কাকিমা, বসবো না। আসলে কাকুর সাথে একটু দরকার ছিল। আমি একটা…
– আরেহ্, কাকু একটু বাইরে গেছে। এক্ষুণি চলে আসবে। এসো, দুটো নাড়ু খেয়ে যাও।
– হেহেহেহেহে।
– তোমায় তো ফাঁকা পাওয়াই যায় না। ডাক্তার বলে কথা! সারাদিন চেম্বার নিয়েই ব্যস্ত বুঝি?!
– ঐ আরকি!
– তা তুমি ব্যস্ত থাকো, তাই বরই রান্নাবান্না করে বুঝি?!
– ও তো আমায় ভীষণ হেল্প করে! খুব হেল্পফুল। নিজের অফিস সামলেও সাহায্য করে আমায়!
– দেখলাম, ফেইসবুকে ছবি ছেড়েছ। তোমার বর তোমায় রুটি আলুভাজা টিফিন বানিয়ে দিয়েছে। দেখলাম।
– হ্যাঁ তো! ও তো মাঝে মাঝেই আমায় টিফিন বানিয়ে দেয়।
– শোনো বৌমা, তোমায় একখানা কথা বলি। বরকে রান্নাঘরে ঢুকতে দিও না, ওভাবে সংসার হয় নাকি?! ওভাবে সোয়ামীর ভালোবাসা পাওয়া যায় না। সোয়ামীর মন পেতে গেলে একটু ভালোমন্দ রেঁধে খাওয়াতে হয়।
– তাই?!
– তাই নয় তো কি বৌমা?! তোমায় আমি আপন ভাবি, তাই সংসারের গোপন কথা বলছি। পুরুষমানুষকে রান্নাঘরে মানায় না বুঝলে!
– আচ্ছা, কাকিমা।
– এই আমাকেই দেখো। তোমার কাকু নারকেল নাড়ু ভালোবাসে বলে, সেই বিয়ের পর থেকে প্রত্যেক বছর বছর আমি নাড়ু বানাই।
– আপনি বানিয়েছেন নাড়ু?
– নয় তো বলছি কি বৌমা?! কম তো বয়স হল না বলো আমার। হাত ব্যাথায় মরণ মরণ দশা। তবু সোয়ামী ভালো খায় বলে কথা, তার জন্য তো আমায় নারকেল নাড়ু বানাতেই হবে গো।
– তাই?!
– এই ব্যাথা হাত দিয়ে ছয়টা নারকেল কুড়িয়ে নাড়ুর পাক দিয়ে নাড়ু বানানো কি চাড্ডিখানি কথা বলো?!
– সেই তো। সেই তো।
– আর কখনো বরকে রান্নাঘরে ঢুকতে দিও না, বুঝলে বৌমা?!
– একদম। ইয়ে কাকিমা নাড়ুটা খুব ভালো হয়েছে খেতে।
– হেহেহেহেহে। থ্যাঙ্ক ইউ, গো। তুমি কি দরকারে এসেছিলে বললে না তো?
– না মানে, কাকু কালকে আমার চেম্বারে গেছিল। বলছিলেন, ছয় ছয়টা নারকেল কুড়িয়ে, অর্ধেকটা গুঁড় আর অর্ধেকটা চিনির নাড়ু বানিয়ে ওনার হাত আর কোমড়ে ভীষণ ব্যাথা। হাতটা ফুলেও গেছে দেখলাম। তাই মলমটা দিতে এসেছিলাম। একটু গরম স্যাঁক করে মলমটা লাগাতে বলবেন কাকুকে, ব্যাথাটা কমে যাবে।
– হুম।
– কাকিমা, আর দুটো চিনির নাড়ু নিই ডিব্বা থেকে? খুব ভালো হয়েছে খেতে। অসাধারণ।
– হুম। হুম।
সৌজন্যে – প্রতিলিপি