পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট ব্লকের সাগরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনস্থ দেউলবাড় গ্রামের বাসিন্দা পরেশ ঘড়া চাকরী করে দেওয়ার নাম করে ৩০ লক্ষ টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ করেছেন উত্তর জিঞাদা হাইস্কুলের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। ওই সংক্রান্ত অভিযোগপত্র আজ কোলাঘাটের বিডিও, শিক্ষা দপ্তরের ডি.আই. এবং পুলিশের এসপি,কোলাঘাট থানার ও.সিকে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে পরেশবাবুর একমাত্র পুত্র গৌতম ঘড়া এম.এ. ও বি.এড. পাশ করার পর বর্তমানে বেকার। গত ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে স্থানীয় উত্তর জিঞাদা হাইস্কুলের কর্মরত শংকর মাইতি গৌতমকে শিক্ষকতার চাকরী করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় ।উল্লেখ্য উত্তর জিঞাদা গ্রামের বাসিন্দা শংকর মাইতি। শর্ত অনুযায়ী জিঞাদা হাইস্কুলের কর্মচারী শিবপ্রসাদ মণ্ডলকে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন পরেশবাবুকে। টাকা দিলে শিবপ্রসাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীর ভীমপুর সাঁওতাল হাইস্কুলে গৌতমকে ভূগোলের শিক্ষক হিসাবে চাকরী করে দেবে বলে জানায়।
অভিযোগ ওই কথার ভিত্তিতে পরেশবাবু শিবপ্রসাদের বাড়িতে গিয়ে ২২ জানুয়ারী ৫০ হাজার,২৩ জানুয়ারী ৫ লক্ষ টাকা নগদে দেন। তারপর ২৪ জানুয়ারী শিবপ্রসাদদের শ্রীহরি হোসিয়ারীর অ্যাকাউণ্টে ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অনলাইনে জমা করেন। সব মিলিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার পর শিবপ্রসাদ ২৭ জানুয়ারী আবার বলে,আরো ১২ লক্ষ টাকা এরিয়ার হিসাবে ওকে পাইয়ে দেবে ২০১৬ সাল থেকে চাকরী করছে এই পরিপ্রেক্ষিতে। এজন্য আরও ৮ লক্ষ টাকা দিতে হবে। ঐ কথামতো ৫ ফেব্রুয়ারী ফের ৪ লক্ষ টাকা পূর্বের অ্যাকাউণ্টে জমা দেন পরেশবাবু। ওই অভিযোগপত্রে উনি জানায়,এরপর শিবপ্রসাদ আমাকে আ্যাপয়েণ্টমেণ্ট ও জয়েনিং লেটার দেয়। একই সাথে জানায় স্কুলে কেস চলছে । কেস মিটে গেলে জয়েন করানো হবে। তারপর ২০২১ সালের ৫ নভেম্বের ৪৯ হাজার ৪৯০ টাকা অ্যাকাউণ্টে জমা করে। ৬ নভেম্বর ফের ৩ লক্ষ টাকা দেয়।
এরপরও চাকুরী নিয়ে প্রায় দেড় বছর নানা মিথ্যা অজুহাত দেখায় শিবপ্রসাদ। অতঃপর ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে গৌতমকে চাকুরী পাইয়ে দিতে আরো ৮ লক্ষ টাকা দিতে বলে। ঐ পরিপ্রেক্ষিতে ৭ আগষ্ট ৫ লক্ষ, ১৬ আগষ্ট ২ লক্ষ এবং ২১ আগষ্ট তারিখে ১ লক্ষ মিলিয়ে মোট ৮ লক্ষ টাকা পুনরায় ওকে নগদে দেন পরেশবাবু। যা ওনার স্বাক্ষরিত ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত রয়েছে।এরপরেও চাকুরী হয়নি
এই অবস্থায় গৌতম একদিন ভীমপুর সাঁওতাল হাইস্কুলে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখে ঐ স্কুলের অ্যাপয়েণ্টমেণ্টের বিষয়টি ভুয়ো। এরপর পরেশবাবুরা তাদের দেয় টাকা ফেরতের বিষয়ে শিবপ্রসাদের উপর চাপ সৃষ্টি করলে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের উপস্থিতিতে গত ২০২৪ সালের ২২ জুলাই তারিখে একটি গ্রাম্য সালিশী সভা হয় বরদাবাড় প্রাইমারী স্কুলে। সেই সভায় অভিযুক্ত ৬ মাসের মধ্যে ৫ লক্ষ এবং পরের দু’ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ টাকা ফেরৎ দিয়ে দেবে বলে জানায়। প্রতারিতের অভিযোগ সালিসী সভার পর ৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও মাত্র ১ লক্ষ টাকা ফেরৎ দিয়ে নানা অজুহাত দেখাতে থাকে। পরে ফোন করে টাকা চাইলে গৌতম ও পরেশকে কেটে কুচিয়ে মেরে দেবে বলে শাসায় অভিযুক্ত। পরেশবাবু বর্তমানে চূড়ান্ত হতাশ ও আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই অভিযোগপত্রে।
