Select Language

[gtranslate]
২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বুধবার ( ১২ই মার্চ, ২০২৫ )

এগরার নেগুয়ায় বর্ণাঢ্য ঋষি বঙ্কিম মেলা উদযাপন

সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শুভাগমনের স্মৃতিতে আয়োজিত ‘ঋষি বঙ্কিম মেলা’ ঘিরে মেতে উঠেছে এগরার নেগুয়া। শুক্রবার থেকে ‘নেগুয়া আনন্দমঠ সঙ্ঘের’ উদ্যোগে স্থানীয় বড়পুকুর সুভাষ ময়দানে দশ দিনব্যাপী বঙ্কিম মেলা সাড়ম্বরে শুরু হয়েছে। সন্ধ্যায় বর্ণময় বঙ্কিম মঞ্চে আয়োজিত ৩১তম বর্ষের মেলার প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত গবেষক ড: প্রণব কুমার পট্টনায়ক। এছাড়াও ছিলেন কমিটির স্থায়ী সভাপতি তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক, এলাকার বিধায়ক তরুণকুমার মাইতি, এগরা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমিয় কুমার রাজ, ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রৌউপ হোসেন, উপপ্রধান প্রতিভা জানা, সমাজসেবী যাদব চন্দ্র বর-সহ বিশিষ্টরা। এলাকায় সুস্থ-সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে বছরভর নানা সামাজিক কর্মসূচি করে আনন্দমঠ। বঙ্কিম মেলা সেই উদ্যোগেরই অন্যতম অঙ্গ। মেলা উপলক্ষে প্রতিদিনই রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাহিত্যবাসর, গুণীজন সংবর্ধনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী, শিক্ষামূলক প্রদর্শনী, বঙ্কিম, মধুসূদন সহ মনীষীদের জীবনী নিয়ে আলোচনাসভা রয়েছে। বিভিন্ন দিনে টিভি সিরিয়ালের তারকারা মঞ্চ মাতাবেন।
১৮৬০ সাল নাগাদ তৎকালীন নেগুয়া মহকুমার (বর্তমান এগরা মহকুমা) ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি এই এলাকায় বেশ কিছুদিন ছিলেন। এখানে রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের শুভাগমনের স্মৃতি। তাঁর কালজয়ী উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’র পটভূমি নেগুয়াতেই রচিত  হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদদের অভিমত। তাই কপালকুণ্ডলার উদ্ভবক্ষেত্র বলা হয় নেগুয়াকে। পরবর্তীকালে বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ১৯১৩ সালের ২৯ শ্রাবণ গড়ে ওঠে নেগুয়া আনন্দমঠ সঙ্ঘ। আনন্দমঠ উপন্যাসে বর্ণিত সন্ন্যাসীর দল যেভাবে অসামান্য কর্মদক্ষতায় সর্বদা প্রাণচঞ্চল থেকে মানসসেবায় নিয়োজিত ছিলেন, সেভাবেই আনন্দমঠ সঙ্ঘের সদস্যরাও মানবসেবায় শামিল হন। ১৯৯৫ সালে একদিন সঙ্ঘের সদস্যরা আলোচনায় বসেছিলেন। সেখানে সঙ্ঘের দু’একজন সদস্য প্রস্তাব দেন বঙ্কিম মেলা আয়োজনের। এরপর তৎকালীন এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী প্রবোধচন্দ্র সিনহার সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৯৫ সালে মেলা শুরু হয়। তার আগে বড়পুকুর সংলগ্ন স্থানে সাহিত্যসম্রাটের আবক্ষ মূর্তিও বসে। তৎকালীন রাজ্যপাল রঘুনাথ রেড্ডি, প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে আবক্ষমূর্তির আবরণ উন্মোচন হয়েছিল। মেলা শুরুর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রবোধকৃষ্ণ  দাসমহাপাত্র, বিমলেন্দুবিকাশ জানা, অর্ধেন্দু দাসমহাপাত্র, বিশ্বনাথ দাসমহাপাত্র, যতীন্দ্রনাথ জানার, অনিল দাসমহাপাত্র, খগেন্দ্রনাথ শীট, রমাকান্ত নন্দী, রজনীকান্ত দাস, পূর্ণচন্দ্র দে, সুবিমল দাসমহাপাত্র, নলিনীরঞ্জন দাসমহাপাত্র, তপন দাসমহাপাত্ররা। তাঁদের অনেকেই আজ আর নেই। তবে  তাঁদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত মেলা মাথা উঁচু করেই এগিয়ে চলেছে।

সঙ্ঘের সদস্য সংখ্যা ৮০। মেলার সূচনাপর্ব থেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন বর্তমান সম্পাদক কমলেন্দু দাসমহাপাত্র, সভাপতি ননীগোপাল জানা, কোষাধ্যক্ষ অজিত কুমার নন্দী, প্রধান উপদেষ্টা অজিত কুমার জানা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক কৌশিক দাসমহাপাত্র, অলক শীট, আশিস জানা, অজিত নন্দী, সুশান্ত জানারা। সঙ্ঘ নানা সামাজিক কাজেও ব্রতী। সঙ্ঘের পরিচালনায় ‘রামকৃষ্ণ শিক্ষানিকেতন’ নার্সারি স্কুল ও একটি নৃত্যপ্রশিক্ষণ স্কুলও চলে। করোনা-পরিস্থিতিতে, যশ ও উমপুন ঘূর্ণিঝড়ের সময় পীড়িত মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতার করেছিল আনন্দমঠ। আনন্দমঠের সম্পাদক ও সভাপতি বলেন, সাহিত্যসম্রাটের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা নিরন্তর সামাজিক কাজকর্মের মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকতে চাই। পাশাপাশি লক্ষ্য, মেলার আয়োজন করে মানুষকে আনন্দদান।

Related News