Select Language

[gtranslate]
১২ই পৌষ, ১৪৩১ শুক্রবার ( ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ )

।। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ পুনরদ্ধারে কাজলা জনকল্যাণ সমিতি ।।

পূর্ব মেদিনীপুরের কাজলা জনকল্যাণ সমিতি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এবং কোশার ক্লাইমেট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ও টেলাস-কার্বন নামক সংস্থার সহযোগিতায় সুন্দরবন পুনরুদ্ধার ও কার্বণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে।


জলবায়ু সমস্যার হাত থেকে অব্যাহতি লাভ করতে, সমগ্র বিশ্ব এখন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে যার মাধ্যমে এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। যে দেশগুলি অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে এবং যাদের দীর্ঘ উপকূলীয় তটরেখা রয়েছে, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সর্বাধিক। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলি ইতিমধ্যেই ঘন ঘন বিধ্বংসী গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এবং সুপার সাইক্লোনের সম্মুখীন হচ্ছে। ম্যানগ্রোভ বা বাদাবনের পুনরুদ্ধারকে জলবায়ু পরিবর্তনের থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে একটি আধুনিক সমাধান হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে যা কার্বনের একটি প্রাকৃতিক ভান্ডার এবং যা বিভিন্ন উপকূলীয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে সক্ষম।


সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বা বাদাবন এবং যেটি বঙ্গোপসাগরের কাছে ব্রহ্মপুত্র , মেঘনা ও গঙ্গা নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। ভারতীয় সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ ও উত্তর 24 পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে পড়ে। ম্যানগ্রোভ বা বাদাবন উপকূলীয় প্রাণী ও উদ্ভিদের বাসস্থান যা উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি। বর্তমানে, ভারতীয় সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশ অবক্ষয়ের সম্মুখীন হচ্ছে, অবিলম্বে তার পুনরুদ্ধার না করলে ভবিষ্যতে তা আরও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে।


প্রকল্পের লক্ষ্য হল ক্ষয়প্রাপ্ত ম্যানগ্রোভ বন পুনরুদ্ধার করা এবং সুন্দরবনের ক্ষতিগ্রস্ত ম্যানগ্রোভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশে পুনঃবনায়নের মাধ্যমে সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ও পরিবেশগত অবস্থার উন্নতি করা। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রীনহাউস গ্যাস (GHGs) অপসারণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে সাহায্য করা, ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের দ্বারা জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করা, প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বারা কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের জীবিন-জীবিকা সুনিশ্চিত করণে সাহায্য করা, উপকূলীয় মাটির ক্ষয় রোধে সাহায্য করা এবং ঘূর্ণিঝড়-জনিত দুর্যোগের প্রভাব প্রশমিত করা।

এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে কার্বন ফাইন্যান্স থেকে স্থানীয় জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে সাহায্য করা। জাতিসংঘের (UN) তালিকাভুক্ত বিভিন্ন উন্নয়নের লক্ষ্যে (SDGs) তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়া।
এই উপলক্ষ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পাথর প্রতিমা ব্লকের পাথরপ্রতিমা বাজারে একটি সভাগৃহে সুন্দরবন পুনরুদ্ধার ও কার্বন প্রকল্প সম্পর্কে ২১ ফেব্রুয়ারী তারিখে আলোচনা সভা হয়।

এই আলোচনা সভার উদবোধন করেন পাথর প্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সেক আব্দুর রেজ্জাক। তিনি বলেন ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের জন্য এই প্রকল্প আগামী দিনে সুন্দরবনের মধ্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোশার ক্লাইমেট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিঃ-এর আধিকারিক ড. সুদর্শন দত্ত, ড. অনুজ পারিহার, টেলাস-কার্বনের প্রতিনিধি দূর্যয় গুহনিয়োগী, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বায়ো-ডাইভার্সিটি দপ্তরের জেলা প্রতিনিধি কমল দাস, পাঁশকুড়া বনমালী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মনোজিত দেবনাথ, বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ-প্রধান, পঞ্চায়েত সচিব, এক্সিজিকিউটিভ এ্যাসিস্ট্যান্ট, জি.আর.এস., রামগঙ্গা ফরেস্ট রেজ অফিসের প্রতিনিধি এবং কাজলা জনকল্যাণ সমিতির জেলা কো-অর্ডিনেটর বিবেকানন্দ সাহু ও দেবাসিশ পন্ডা, প্রমুখ।


সুন্দরবন এলাকায় প্রায় ১০০০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের জন্য সুন্দরী, বাইন, কাকড়া, গরাণ, গর্জন, ধুন্ধুল, কেওড়া ইত্যাদি প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছের চারা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য স্থানীয় এলাকার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাগণ যুক্ত হয়েছেন। আগামী তিনবছর পর্যন্ত পাথরপ্রতিমা ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নদীতীরবর্তী ফাঁকা জায়গায় ম্যানগ্রোভ চারা লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলবে।

প্রকল্পের চতুর্থ বছর থেকে ম্যানগ্রোভ গাছ কত পরিমান কার্বণ শোষণ করছে তা পরিমাপ করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এবং স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করার পরিকল্পনা রয়েছে।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের গোপালনগর, লক্ষ্মী জনার্দনপুর, অচিন্ত্যনগর, বনশ্যামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মায়ের ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের কাজ লেগে পড়েছে।

অচিন্ত্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কামদেবপুর গ্রামের অধিবাসী “মিলন স্বনির্ভর গোষ্ঠী”-র সদস্যা অপর্না গিরি বলেন- আমরা নদীর ধারে সারাজীবন থাকি। প্রতিবছর ঝড়ঝঞ্ঝা, বন্যা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের সম্মুখিন হই। আমরা জানি ম্যানগ্রোভ গাছ নদী বাঁধের ভাঙন রোধে সাহায্য করে। কিন্তু এখন আমরা জানতে পেরেছি ম্যানগ্রোভ বাতাসের কার্বণ শোষণ করে মাটির মধ্যে মিশিয়ে দেয় এবং জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় সহযোগিতা করে। আমরা নতুন উদ্যমে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেছি এবং এগুলি রক্ষণাবেক্ষণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি।

Related News

Also Read