Select Language

[gtranslate]
২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বৃহস্পতিবার ( ১৩ই মার্চ, ২০২৫ )

।। ঘুম ।।।

শুভ্রা পাল :- গিন্নি … আমার কাছটায় সরে এসে শোও ।
এ্যাঁ ? কেন ?
কেন আবার ! পাশে শুলে শান্তিতে ঘুমোই ৷
ঘুমোও ঘুমোও ৷ কাল বৌমা সকাল সকাল বেরোবে, টুবলুর স্কুল আছে ৷ সকালে উঠে পড়তে হবে ৷ তোমাকে একবার বাজার যেতে হবে ৷
সে তুমি ঘুমোও না ৷ কে বারণ করেছে ৷ শুধু আমার পাশে এসে ঘুমোও ৷
এই বদ অভ্যাস তো ছাড়তে হবে বুড়ো ৷ আজ বাদে কাল আমি না থাকলে তখন তো বাঁচতে পারবে না !

বছর চুয়াওর এর স্বপনবাবু ও তাঁর স্ত্রী বছর চৌষট্টীর রীতা দেবীর বড় নাতি পড়াশোনার জন্য বাইরে থাকে ৷ ছেলে বৌমা দুজনেই চাকরি করেন ৷ ছোট নাতি বেশ ছোট স্কুলে পড়ে ৷ বুড়ো বুড়ির সকালটা কাটে ভীষণ ব্যস্ততায় ৷ দুজনেই এখনও বেশ শক্ত হাতে সবটা সামলে যাচ্ছে ৷ ছেলে বৌমাও সময় সুযোগ মতো বুড়ো বুড়িকে ছুটি দেয় ৷ তাই সব কিছু বেশ সুস্থ ও স্বাভাবিক ৷

কি হল গিন্নি এদিকে এলে না ? কত কথা তো বলা বাকি থেকে গেছে ৷ তোমার কি কোনওদিনই সময় হবে না সেগুলো শোনার ?
যখন যা বলো সবই তো শুনি ৷ আবার নতুন কি বলার আছে শুনি ?
স্বপন বাবু উঠে বসলেন …. বললেন …. রীতা আমি চলে গেলে তুমি আমাকে ভুলে ঠিকই থাকতে পারবে …. তোমার নাতি বাবুরা যে তোমায় খুব ভালোবাসে ৷ কিন্তু আমি তো …..
তোমার শরীর তো দিন দিন খারাপ করে ফেলছ রীতা !
সকাল থেকে এত কাজ তোমার করার কি দরকার ? বৌমা অনেকবার তোমাকে অত সকালে উঠতে বারণ করেছে ! তাও কথা শোনো না ! এই ঠান্ডায় ভোর বেলা স্নান করার ই বা কি দরকার ? রান্নার লোক কাজের লোক তো সময় মতো এসে সব করেই দেয় তাহলে ? বুঝলাম যে ভোর বেলা ওঠা তোমার বরাবরের অভ্যেস কিন্তু বয়সটা তো দেখো ৷


রীতা দেবী কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর বললেন …. জানো তো এত বছর এই সংসারটা নিজের হাতে সামলেছি সংসারের খুঁটিনাটি সবকিছুই একাই দেখেছি ৷ তোমার তো অফিস সামলে ওত সময়ই থাকতো না ৷ আর খুব অসুবিধা না হলে আমি তোমাকে সংসারের ছোটখাটো প্রয়োজনের কথা বলতাম না ৷ একাই সামলাতাম ৷ বৌমা আসার পরও করে গেছি কারণ বৌমা অফিস সামলে সংসারের টুকিটাকি বোঝার আগ্রহ দেখায়নি কখনো ৷ দীপু হবার পর তো যেন মনে হল আবার আমি তিরিশ বছর আগে ফিরে গেছি …. আমাদের দিব্যর ছোটবেলায় ৷ বৌমা সকাল ৮টায় বেরোতো ফিরতে সন্ধ্যে ৷ ওই বাচ্চাটা কে নিয়ে আমার সারাদিন কাটতো ৷ আমার ভালো লাগতো | আয়া রাখার জন্য রাজি হয়নি ৷ ভয় লাগতো অন্য কারো হাতে ছাড়তে ৷ রান্নার জন্য বৌমাই লোক রেখেছিল নিজে সময় দিতে পারতো না সংসারে সেই জন্যই হয়তো ৷ ভালোই করেছিল জানোতো অনেকটা সময় পেতাম দীপুকে নিয়ে কাটাবার কিন্তু কি জানো মানুষ কি আর অভ্যাস ছাড়তে পারে ! বলো?
রান্নার লোকের হাতের রান্না তোমার পছন্দ হয়না ৷ দিব্যও নাকে মুখে যাহোক করে গুঁজে দৌড়োয় ৷ বৌমাও বোঝে …. কিন্তু ওরও কিছু করার নেই ৷ তাই সকাল থেকে রান্নার লোকের সঙ্গে সঙ্গে থাকি যাতে রান্না গুলো খাওয়া যায় ৷ তাছাড়া সংসারে যে অনেক কাজ থাকে গো সব কি আর লোক দিয়ে করানো যায় ? তুমি তো দেখেছ …. আমি বসে থাকতেও পারিনা ৷
কিন্তু গিন্নি তোমার শরীর যে তোমার সাথ দিচ্ছে না ! শরীর তোমার যত্ন চাইছে …. রেস্ট নাও ৷ সুগার প্রেশার কাউকেই তো দূরে সরিয়ে রাখনি !
তুমি নিজের শরীর নিয়ে ভাবো বুঝলে ….. তোমার মর্নিং ওয়াক এর বন্ধুরা কি এবার আমার পিছনে পড়েছে !
না না …. ওরা কেন তোমার পিছনে পড়বে গিন্নি ? ওরা জানে স্বপনদা গিন্নি অন্ত প্রাণ …. তাই তার গিন্নিকে নিয়ে কথা বলতে তারা সাহস করে না ৷ বুঝলে ?
হুম বুঝলাম ৷ এবার ঘুমোও ৷ অনেক রাত হল ৷

মোবাইল এর অ্যালার্ম এর আওয়াজ এ ঘুম ভাঙলো স্বপনবাবুর ৷ একটু অবাক হল স্বপনবাবু ৷ আর গিন্নির হাঁকডাক কোথায় ? পাশ ফিরে চাইলেন স্বপনবাবু ৷ একি ! রীতা এখনও ঘুমোচ্ছে ! যাক তবু কথা শুনেছে ৷

কিন্তু ওত ব্যস্ত মানুষটা এত টা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে কি করে ?! ওর ঘুম কি আর ভাঙবে না !

Related News