Select Language

[gtranslate]
২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বৃহস্পতিবার ( ১৩ই মার্চ, ২০২৫ )

।। বাঙ্গালীর “মহানায়ক” জন্ম দিবসে আপনাকে শতকোটি প্রনাম ।।


সশরীরে না থেকেও বাংলা ও বাঙালি মননে প্রবল ভাবে আছেন তিনি।ভাল মন্দ সবেতেই  টলিউডের  দর্শক আজও তাঁকেই খোঁজে । আর তাই তাঁর জন্মদিন মানে আদতে বাংলা সিনেমার জন্মদিন। এমন একটা দিনে সব মাধ্যমেই শুধু তিনি।আর সেই  তিনি হলেন আমার-আপনার সকলের প্রিয় উত্তম কুমার।

১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে কলকাতায় ভবানীপুরে ৫১ আহিড়ীটোলা স্ট্রীটে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মা চপলা দেবী। তাঁর এক দিদি ও দুই ভাই যথাক্রমে বরুণ কুমার ও তরুণ কুমার । ছোটোবেলাতেই তাঁর দিদি মারা যায়। ছোটো ভাই তরুণ কুমারও ছিলেন বাংলা সিনেমার এক জনপ্রিয় অভিনেতা। তাঁর বাবা ছিলেন কলকাতার মেট্রো সিনেমা হলের এক সাধারণ কর্মচারী। তাদের নিম্নমধ‍্যবিত্ত পরিবার ছিলো।

ছেলেবেলা থেকেই খেলাধুলা ও অভিনয় পাগল ছিলেন। বাড়ির বড়োদের থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমা দেখা, নাটক দেখা ছিল তার নেশা। নিজের বাড়িতেই পুরোনো শাড়ি টাঙিয়ে তৈরী করেছিলেন সুহৃদ সমাজ এবং পরে আবার পাড়ার ও স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে পাড়াতেই মাচা ও পর্দা খাটিয়ে গড়ে তুলেছিলেন লুনার ক্লাব এই দুই জায়গাতেই তিনি অভিনয় করতেন।তাঁর আদর্শ ছিলেন নাটকে শিশির কুমার ভাদুড়ি ও সিনেমায় প্রমথেশ বড়ুয়া।

পারিবারিক আর্থিক অনটনের জন‍্য কলেজ শেষ করতে পারেননি তিনি। কলকাতা বন্দরে কেরানির চাকরিতে মাসিক ২৭৫ টাকা মাইনে দিয়ে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। তবে চাকরি করলেও অভিনয় থেকে বিরত থাকতে পারেননি।

উত্তম কুমারের সাফল্য কিন্তু সহজে আসেনি।১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার বছরে উত্তম কুমার তার এক বন্ধুর সহযোগিতায় প্রথম মায়াডোর নামে একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন। পাঁচ দিনের কাজের জন‍্য দৈনিক পাঁচ সিকি করে পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ‍্য জীবনের প্রথম ছবিই মুক্তিলাভ করেনি তাঁর। পরপর ব‍্যর্থতা তাঁর চলচ্চিত্র জীবনকে রীতিমতো সংকটে ফেলে দিয়েছিলো। ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে অনেক অপমান ও লাঞ্ছনা সহ‍্য করতে হয়েছিল। সেটে ঢুকলেই তাঁকে ব‍্যঙ্গ করা হত।ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর নাম রাখা হয় “ফ্লপ মাষ্টার জেনারেল”।আর আজ প্রয়ানের ৪৩ বছর পরেও তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা।তাঁর খ‍্যাতি শুধু পূর্ব ভারত কিংবা প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ নয়, সমস্ত সীমা অতিক্রম করে পৃথিবী ব‍্যাপি বাঙালিদের মধ‍্যে বেষ্টিত।

বসু পরিবার চলিচ্চিত্রে তিনি প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এখানে তিনি ছিলেন অন‍্যতম মূখ‍্য ভুমিকায়। এর ঠিক পরের বছর ১৯৫৩ সালে একই ব‍্যানারে আর একই পরিচালকের সঙ্গে সাড়ে চুয়াত্তর মুক্তি পাবার পরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন।ছবিটি ব্লকবাষ্টার হয়। সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে তিনি প্রথম অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন। ১৯৫৪ সালে মুক্তি পেল উত্তম অভিনীত ১৪টি ছবি, তার মধ্যে সাতটিই সুচিত্রার সঙ্গে জুটি বেঁধে।

১৯৫৪ সালে পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত কালজয়ী ছবি অগ্নিপরীক্ষা সিনেমার পর তিনি রাতারাতি তারকা হয় যান। এই চলচ্চিত্রটি বাংলা সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং বক্স অফিসে রেকর্ড গড়ে।এরপরে আমৃত্যু তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে একচ্ছত্র ভাবে শাসন করে যান।

উত্তম কুমার তার কেরিয়ার জুড়ে প্রায় ৫০জনেরও বেশি নায়িকার সাথে কাজ করেছেন। তাঁর এক বিরল ক্ষমতা ছিলো সমস্ত নায়িকার সাথে দারুণ রসায়ন ফুটিয়ে তোলা পর্দায়। নায়িকাদের সঙ্গে জুটির মধ‍্যে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তার জুটি সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও। এছাড়াও রয়েছেন কিংবদন্তি সুপ্রিয়া দেবী ও সাবিত্রী চ‍্যাটার্জি।এর পাশাপাশি তিনি কাজ করেছেন মাধবী মুখার্জি, শর্মিলা ঠাকুর, মালা সিনহা, অঞ্জনা ভৌমিক, অরুন্ধুতি দেবী, কাবেরি বসু, সুমিত্রা দেবী, মৌসুমী চ‍্যাটার্জি, সুমিত্রা মুখার্জি, বৈজয়ন্তীমালা, বাংলাদেশী অভিনেত্রী অলিভিয়া লোপেজ । ষাটের দশকে তিনি আশা পারেখের সঙ্গেও কাজ করেছেন ঝংকার নামে একটি ছবিতে তবে সেটি সম্পূর্ণ হয়নি।

শুধু চলচ্চিত্র অভিনেতা নন উত্তম কুমার একই সাথে চিত্রপ্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক।’দৃষ্টিদান’ দিয়ে শুরু করে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত উত্তম কুমার অভিনীত, মুক্তিপ্রাপ্ত মোট ছবির সংখ্যা ২০২টি যার মধ‍্যে ৩৯টি ব্লকবাষ্টার, ৫৭টি সুপারহিট, ৫৭টি হিট ও ৪৯টি অসফল ছবি আছে। অর্থাৎ তার সাফল্যের হার ৭৬ শতাংশেরও বেশি।১৯৬৮ সালে শিল্পী সংসদ তৈরি করেন এই প্রবাদ প্রতিম অভিনেতা। আর্থিক ভাবে সমস্যায় থাকা অভিনেতাদের সাহায্য করাই সংসদের কাজ।

শাশ্বত সম্পর্ক, শঠতাহীন হাসি, দিগন্তছোঁয়া প্রেমের সিন্দুক খুলতে উত্তমকুমারের ছবির কাছে মানুষ আজও মিছিল করে যাচ্ছেন।কোনও অন্যায়বোধ না জাগিয়েও সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশের পুরুষ ও নারীর মধ্যে তিনি জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন রোম্যান্সের স্বপ্ন।আর আজ অর্থনীতির দুর্বিপাকে ডুবতে বসা ইন্টারনেট যুগের বাঙ্গালীও সব,সব ভুলে রোম্যান্সের অতল জলে ডুবে যেতে যেতে অদৃশ্য কোনও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে নিজেকেই বলছেন, ‘এক বার বলো,আমি উত্তমকুমার!’

সাফল্যের এভারেস্টের চূড়ায় অনেকেই ওঠেন। কিন্তু সেখানে পাকাপাকি ভাবে থেকে যেতে অমানুষিক ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম আর একাগ্রতা লাগে। এমনি এমনি হয় না।আজও এই ডিজিটাল যুগেও, উত্তমের হাসির চেয়ে বড় ব্র্যান্ড বাংলা ছবিতে আর কী! আজও পত্রপত্রিকায় উত্তমের বহুচর্চিত গল্পগুলি নতুন প্যাকেজে এলে বিক্রি গ্যারান্টিযুক্ত।

বাঙ্গালীর “মহানায়ক” জন্ম দিবসে আপনাকে শতকোটি প্রনাম জানায় এখন সংবাদ পরিবার

Related News