Select Language

[gtranslate]
২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ শনিবার ( ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ )

।। আ্যসিড ।।

শর্মিষ্ঠা কর্মকার মিশ্রা :- “জ্বলে গেল রে….উফ্! কি জ্বালা!….জ্বলে গেল সব…উফ!”

ছেলেটির পুরুষাঙ্গ সমেত পেটের নিচের অনেকটা জায়গা এ্যাসিডে পুড়ে গেছে। অথচ শরীরের অন্য কোথাও কোনো আঘাতের চিন্হ নেই। পুলিশের লোক অনেকবার জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছে, এই ঘটনা কি করে ঘটল। কোনো ডাক্তার অথবা নার্স তার কাছে যেতে চাইছে না। বড় ডাক্তার আসছেন, তিনিই যা করার করবেন। যদিও ছেলেটির যা অবস্থা, পুরুষাঙ্গটি তো বাদ যাবেই তারপরেও কি হবে সে তো ডাক্তারই বলতে পারবেন।
*******************************

…… চৈতালী তোর কি হয়েছে বলবি? একমাসের বেশী সময় তুই কলেজে আসছিস না। তোকে আমি প্রায় রোজ জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছি কি হয়েছে বল, কি হয়েছে বল! তুই না তো কিছু বলছিস, না কলেজে আসছিস….

…… আমার কিছু হয়নি।

…… তাহলে কলেজে আসছিস না কেন?

…… এমনিই। শরীর ভাল নেই।

…… আবারও মিথ্যা বলছিস তুই। কিন্তু কেন??

…… কই না তো। আচ্ছা আমি রাখছি এখন, পরে কথা বলব।

চৈতালী ফোন রাখার পর মৈত্রী ভাবতে লাগল, কিন্তু কোনো উত্তর পেল না। হটাৎ কি এমন হল যার জন্য চৈতালীর মত হাসিখুশি একটা মেয়ে এইভাবে চুপ হয়ে গেল, কলেজে আসা বন্ধ করে দিল। কলেজের পর মৈত্রী, চৈতালীর বাড়ি যাবার জন্য মেট্রো ধরল যদিও ওকে কিছুই জানালো না।
বাড়ির কলিং বেল বাজাতে চৈতালীর মা এসে দরজা খুলে দিল। মৈত্রীকে দেখে আশ্চর্যও হল না, আবার উত্তেজিতও হল না। চৈতালী কেমন আছে জিঞ্জাসা করতে সাধারণ ভাবেই বলল, শরীর খারাপ তাই এতদিন কলেজে যেতে পারেনি।
মৈত্রী ঘরে ঢুকে দেখে চৈতালী বিছানার এক কোনায় জানালার গ্রীল ধরে বসে আছে। মুখ দেখে আন্দাজ করাই যায় কিছু ঘটেছে মেয়েটার উপর দিয়ে, কেমন যেন নেতিয়ে পরেছে। বন্ধুকে দেখে শুস্ক হাসি দিয়ে কথা শুরু করল…
….. তুই আবার কষ্ট করে বাড়ি আসতে গেলি কেন? আমি কিছুদিন পর থেকেই কলেজে যেতাম তো!

….. আসলে ভাবলাম এতদিনের নোটসগুলো তোকে দিয়ে যাই। তুই বাড়িতে বসে দেখে নিতে পারবি। আর তুই কেমন আছিস সেটাও জানা….

কথা শেষ হবার আগেই চৈতালীর মা কাজের মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঢুকল, সাথে বেশ কিছু খাবারের প্লেট নিয়ে। মা যেন মেয়েকে কিছু ইশারা করল মনে হল, তারপর মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে একটু রূঢ়ভাবেই বলল,
….. ভালই করেছো ওকে নোটসগুলো দিয়ে। তবে এরজন্য এত কষ্ট করে বাড়ি না আসলেও হত, ওর ফোনে ফটোগুলো পাঠিয়ে দিলে আমরা প্রিন্ট বার করে নিতে পারতাম। ও তো কিছুদিন পর থেকেই কলেজে যাবে।

মৈত্রী এর আগে একবার মাত্র চৈতালীর বাড়ি এসেছিল, তখন চৈতালীর মা ভাল ব্যবহারই করেছিল। উচ্চশিক্ষিত ও মার্জিত যৌথ পরিবার বলতে যা বোঝায়, এরা সেরকমই। বেশ উদারমনস্ক এবং স্বাধীনচেতা বলেই মনে হয়েছিল বাড়ির সবাইকে। কবিগুরুর জন্মবার্ষিকীতে খুব বড় করেই অনুষ্ঠান হয় এই বাড়িতে। নাচ, গান, কবিতা পাঠ, সাথে কবিগুরুর পছন্দসই খাবারও করা হয়। বাড়ির সবাই কিছু না কিছুতে অংশগ্রহণ করে। গতবছর ওরা কয়েকজন বন্ধুরা এসে খুব আনন্দ করেছিল।

মা চলে যাবার পর চৈতালী মুখ খুলল, “কিছু মনে করিস না রে, মার মনমেজাজ একটু খারাপ আছে।”

….. না কিছু মনে করিনি আমি। তুই ঠিক আছিস তো? কোনো কিছু হয়েছে কি? আমাকে বলা যায় কি?

….. আমি ঠিক আছি। কিছু হয়নি আমার। যদি কিছু হয় নিশ্চয় তোকে জানাবো।

মৈত্রী বেরবার জন্য পা বাড়ালো। তারপর ঘুরে এসে চৈতালীর হাত নিজের হাতে নিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বলল,
…..কি ঘটেছে জানিনা। তোকে ঘাটাবো না, তবে যদি কখনও সাহায্যর প্রয়োজন হয় বলিস। বন্ধু হয়েই পাশে দাড়াবো, ভরসা করতে পারিস।

মৈত্রী চলে গেল, চৈতালী ঠাঁই বিছানায় বসে রইল। একটু পরেই ওর মা এল কাজের মেয়েকে নিয়ে খাবার প্লেটগুলো নিয়ে যেতে। খাবার গুলো যেরকম এনেছিল সেরকমই রয়ে গেছে, কারও হাত পরেনি তাতে। কাজের মেয়ে প্লেটগুলো নিয়ে যাবার পর চৈতালীর মা ওর পাশে এসে বসল।

….. আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারছো না। কিন্তু বিশ্বাস করো এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। তোমার উপরে ঘটে যাওয়া অন্যায় অপরাধের একটুও আভাস যদি আমি পেতাম রুখে দাঁড়াতাম তোমার ঢাল হয়ে, ঠিক যেভাবে আজ বংশের মানসম্মানের কথা ভেবে, তোমার আর তোমার ভাইবোনদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তোমাকে এই বিষ হজম করতে বাধ্য করেছি।

….. শুধু মাত্র বংশের কথা ভেবে, পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একজন মেয়ে হয়েও তুমি ধর্ষণের মত এতবড় একটা অপরাধকে মেনে নিতে বলছো মা? আমার শরীরের আমার মনের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে তুমি বোঝার চেষ্টা করেছো একবারও? আমার ভবিষ্যতের কথা বলছো তুমি, আমি কি স্বাভাবিক হতে পারবো কখনও? যে অপরাধ করল সে কোনো শাস্তি পাবে না, আমি তাকে তার উপযুক্ত শাস্তি দিতেও পারব না?

….. চিল্লিও না।
বাইরের ঘরে বাবা, কাকা, দাদু সবাই বসে আছে। কোনো কথা যেন এই ঘরের বাইরে না যায় চৈতি। আর কি শাস্তির কথা বলছ তুমি? ওই কথা বাইরে চাউর হলে তোমার কোনো ধারণা আছে কি হতে পারে? পুলিশের জেরা, কোর্টে উকিলের কটুক্তি মেশানো জেরা, মিডিয়ার জেরা, আত্মীয়স্বজনের জেরা, রাস্তার লোকের জেরা….পারবে তার উত্তর দিতে?
কাছের, দুরের সবার কৃত্রিম সহানুভূতি, লোলুব্ধ চাহনি….তোমার শরীরকে ঘিরে, তোমার চরিত্রকে ঘিরে তাদের বাঁকা বাঁকা হাজারো প্রশ্ন, তোমাকে দিনে রাতে প্রতি মুহুর্ত যে যন্ত্রণা দেবে তা পারবে তো সামলাতে?? পরিবারের মানসম্মানের কথা যদি ছেড়েও দিই, দু’দিন তোমাকে সহানুভূতি দেখাবে এইসব লোকেরা। তারপর তোমাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে, তোমাকেই দোষারোপ করবে নানা অছিলায়। তখন কি তুমি পারবে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে? কখনও শুনেছো একজন ধর্ষিতার জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের কথা?

….. মা!

….. হ্যাঁ! আমি মা বলেই এতগুলো কথা বলতে পারছি। মেয়েরাই শুধু নয়, ছেলেরাও তো ধর্ষণের শিকার হয়। কিন্তু ক’জন ছেলে পুলিশে রিপোর্ট করে?
সবকিছু জানাজানি হলে কে দেবে তোমাকে চাকরি? কে বিয়ে করবে তোমাকে? তার চেয়ে ওটাকে একটা এক্সিডেন্ট ভেবেই নিজেকে সামলে নাও, নিজের পড়াশোনা, নিজের স্বপ্ন পূরণে মন দাও। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সব ঘা শুকিয়ে যাবে।
কাল তুমি চন্দননগরে যাবে দিদার কাছে, এক সপ্তাহের জন্য। ভাই তোমার সাথেই যাবে, তোমাকে দিয়ে আসবে। ওখান থেকে ফিরে আসার পরে কলেজে যাওয়া শুরু করবে। আর দিদার শরীর ভাল নেই, তাই তাঁকে দেখতে যাচ্ছো। এটা মাথায় যেন থাকে।
**********************
কিছুদিন আগে চৈতালি তার এক বন্ধুর জন্মদিনে কয়েকজন বন্ধুদের সঙ্গে রাজারহাটের এক হোটেলে ডিনার করতে গেছিল। ডিনার করতে একটু বেশিই রাত হয়ে গেছিল। হোটেল থেকে বেড়িয়ে দেখে ঘড়িতে তখন প্রায় এগারোটা বাজে।
ভাই বলেছিল গাড়ি নিয়ে আসবে, কিন্তু একটু সময় লাগবে। চৈতালী না করে দিল, ওর এক বন্ধু ওকে পৌছে দেবে বলল। রাতে বাইপাস ফাঁকা ছিল, গাড়িও জোরেই ছুটছিল। সাথে ছেলেটির ভিতরের কামরিপুও প্রকটতর হচ্ছিল। ছেলেটির ইঙ্গিতকে চৈতালী প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি, ফলে ছেলেটিও ধরেই নিয়েছিল অপরপক্ষ রাজি আছে। ইকোপার্কের আশেপাশের কোনো এক ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থামায় ছেলেটি। চৈতালী অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হয়, তখন পালানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু ছেলেটি ধরে ফেলে ওকে, তারপর ধস্তাধস্তি চলে দুজনের মধ্যে। কুকর্মটি করার পর অর্ধনগ্ন চৈতালীকে তার ব্যাগ সমেত ওই জায়গায় ফেলে রেখে ছেলেটি চম্পট দেয় গাড়ি নিয়ে। দেরি হচ্ছে দেখে চৈতালীর মা, কাকিমা বার বার ফোন করতে থাকে, শেষে ফোনের ওপারে মেয়ের কাতর আর্তনাদ শুনে বুঝে নিতে সময় লাগে না তার সাথে কি ঘটেছে কিছুমুহুর্ত আগেই।
আরও একঘন্টা পরে ভাই, মা ও কাকিমা এসে পৌছায় সেখানে। দিদির অবস্থা দেখে ভাইয়ের মাথার ঠিক ছিল না, ও ঠিক করেই নিয়েছিল ছেলেটিকে নিজের হাতে শাস্তি দেবে। কিন্তু চৈতির মা নিজের মাথার দিব্যি দিয়ে আটকায় তাকে। কোনো পুলিশ কেসও করতে দেয়নি সেদিন চৈতালীর মা, কাকিমা। বাড়ির সবার অলক্ষ্যে একপ্রকার লুকিয়ে মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেন তিনি, অন্যদিকে কাকিমা ছেলেকে নিয়ে চুপচাপ ঘরে চলে যায়। মেয়ের কান্নার আওয়াজ যাতে ঘরের চার দেওয়ালের বাইরে না বেরোয় আর এই ঘটনার টু শব্দ যেন কেউ না করে, দুই ভাই বোনকে শাসিয়ে দিয়েছিলেন চৈতালীর মা আগে থেকেই।
বাথরুমে জলের কল খুলে তার নীচে চৈতিকে বসিয়ে দিলেন ওর মা। শরীরের ময়লা, চোখের জল, তার আর্ত চিৎকার সবই জলের সাথে ধুয়ে যেতে লাগল। সাবান, শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে স্নান করিয়ে মেয়েকে বার করলেন, তারপর পরিষ্কার জামাকাপড় পড়িয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। অন্ধকারে চৈতালী বুঝতে পারছিল তার মা আঁচলে মুখ ঢেকে অঝোরে কাঁদছে পাশে বসে, তার দুই বছরের ছোটো খুরতুতো ভাই পাশের ঘরে পায়চারি করছে আর মাঝেমধ্যেই দেওয়ালে ঘুষি মারছে রাগে দুঃখে অপমানে।

না!
সেদিন চৈতালী মরতে পারেনি।
শুধু সেদিন কেন বলব, তারপরেও সে সুযোগ পেলেও চূড়ান্ত পদক্ষেপটা নিতে পারেনি। আত্মহত্যা মানে তো হার স্বীকার করে নেওয়া, বিনা অপরাধে নিজেকে শাস্তি দেওয়া।
না, চৈতি পারেনি হার মেনে নিতে।
********************

দিদা অনেক দিন পর দুই নাতি নাতনিকে একসাথে পেয়ে যারপরনাই খুশি হলেন। জ্যাঠতুতো খুরতুতো নাম হলেও দুই ভাইবোনকে দেখে সবাই ভাবে একই মায়ের সন্তান এরা, একে অন্যকে ছেড়ে চলতে পারে না। ওইদিন দিদার বাড়ি কাটিয়ে নাতি পরেরদিন ফেরত এল, আসার সময় দিদিকে বলে এল যদি কোনো দরকার লাগে ওকে জানাতে।
বাড়ির বাকি সবাই জানল, মেয়ের শরীর খারাপ তাই দিদার কাছে কয়েকদিন থাকতে গেছে। হাওয়া বদলও হবে, সাথে অসুস্থ দিদিমার সাথে দেখাও হবে।

চৈতালীর বাড়ি থেকে আসার পর মৈত্রী আর ফোন করেনি, কিন্তু ওর বিশ্বাস ছিল চৈতালী ওকে ফোন করবেই। আর হলও তাই। ঠিক দিনসাতেক পরে ফোনটা এল, তখন ক্লাস চলছে কলেজে। তখনের মত কল কেটে দিয়ে ক্লাসে মন দিল মৈত্রী, কিন্তু মন বসল না। কোনোমতে ক্লাস শেষ হতেই ও ফোন লাগালো বন্ধুকে।
পরেরদিন সকালে মৈত্রী চলল চন্দননগরে, চৈতালীর ভাইয়ের সাথে ওদের দিদার বাড়ি।
ফোনে চৈতালী কিছুই জানায়নি, শুধু বলেছিল “বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়াবি বলেছিলি। নিজের কথায় অনড় থাকলে বল, ভাই কাল তোকে নিয়ে আসবে চন্দননগরে। আমি এখানে দিদিমার বাড়িতে আছি।”

মৈত্রী সবিস্তারে সব শোনার পর জানালো ঐ ছেলেটিও কলেজে আসেনি এক সপ্তাহ, কিন্তু এখন আবার আসা শুরু করেছে। হয়তো ভেবেছিল যদি কোনো পুলিশ কেস হয় তাহলে গা ঢাকা দেবে, কিন্তু কোনো কিছু না হওয়ায় এখন কলেজে আসছে আর বহাল তবিয়তেই আছে।

….. একজন অপরাধ করেও সবার সমক্ষে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে, সেখানে তুই কেনো নিজেকে অপরাধী ভেবে মুখ লুকিয়ে এখানে পড়ে আছিস?
কেন?

….. কারণ আমার জন্মদাত্রী চায় না যে আমি রুখে দাঁড়াই। কারণ আমার মায়ের কাছে তার পরিবারের মানসম্মান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার চেয়ে। কারণ মা চায়না সমাজ জানুক আমি একজন ধর্ষিতা, ধর্ষিতার জাঁকজমক বিয়ে হয় না যে!

….. তুই কি চাইছিস?

….. জানিনা মৈত্রী। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম, পারিনি। শুধু মনে হয়েছে নিজেকে কেন শেষ করবো? কি দোষ ছিল আমার?

….. আমি আবারও তোকে জিজ্ঞাসা করবো, তুই কি চাইছিস এখন??

….. নিজে হাতে শাস্তি দিতে চাই শয়তানটাকে। যেভাবে আমার শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করেছে, আমার মনকে রক্তাক্ত করছে ঠিক সেইভাবে…. জ্বালিয়ে দিতে চাই, পুড়িয়ে দিতে চাই ওর পুরুষত্বকে।

….. করতেই পারিস! এখানে কে মানা করছে তোকে??

কথাগুলো সমস্বরে ধ্বনিত হল। চৈতালী পিছন ঘুরে দেখল ওর বন্ধু আর ভাই দুজেনেই রয়েছে সামনে।

….. প্ল্যান কি??
*********************
চৈতালীকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ফাঁকা মাঠে ফেলে দিয়ে ছুট্টে গাড়িতে এসে বসল কৌশিক। কোনোমতে গাড়িতে প্যান্টটাকে ঠিক করে নিয়ে স্টার্ট দিল ইঞ্জিন, পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বেড়িয়ে গেল ওখান থেকে। বাড়ি এসেই আফসোস হতে লাগল এই ভেবে যে মেয়েটাকে জীবিতাবস্থায় কেন রেখে এল। এরপর পুলিশ কেস হলে রক্ষে নেই, খামোখা বাবা মার উপরে চাপ হবে। পরের মাসে বিদেশে ঘুরতে যাবার কথা আছে, সব কেচে যাবে।
ভয়ে এক সপ্তাহ কোথাও বেরোলো না কৌশিক, কলেজেও গেল না। বাড়ির লোককে বলল শরীর ভাল লাগছে না। কিন্তু যখন দেখল যে কোনো উচ্চবাচ্চো নেই কোথাও, তখন ধীরে ধীরে স্বমহিমায় ফিরতে লাগল সে। কলেজে যাওয়া শুরু করল, নিজের বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দেওয়া, মুভি দেখা, রাত করে বাড়ি ফেরা সবই চলতে লাগল।
বেশ কিছুদিন পর একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন করল কেউ। কৌশিক ফোন ধরতে ফোনের ওপার থেকে যে কথা বলল, তাতে সে প্রথমে ঘাবরেই গেল।
চৈতালী জানালো কৌশিক তার সাথে যা করেছে সেটা নিয়ে শুরুতে খারাপ লাগা থাকলেও পরে সেটা চলে গেছে। বরং কৌশিকের উপর সে আর রাগ করে নেই। শুধু এই ঘটনা যেন কাউকে সে না জানায়…কৌশিক কথা দিল কাউকে জানাবে না। চৈতালী ফোন কেটে দিল।

কৌশিক নিজের গাড়ি চালিয়েই কলেজে যায়। আজও তাই গেছিল, কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় গাড়ি স্টার্ট হচ্ছিল না কিছুতেই। মৈত্রী সামনেই ছিল, বলল আজ ওর এক বন্ধু গাড়ি নিয়ে এসেছে ওকে নিয়ে যেতে। তাই আর ক্যাব বুক করতে হবে না, ওরা কৌশিককে বাড়ি ছেড়ে দেবে। কৌশিক রাজি হয়ে মৈত্রীর সাথে বেরল।
গাড়ির পিছনের সীটে কৌশিক ছাড়া আর একজন বসেছিল, চৈতালী। সামনে ছিল মৈত্রী, চৈতালীর ভাইয়ের হাতে ছিল স্টিয়ারিং। কৌশিক ওকে দেখে হালকা হাসি দিল, চৈতালীও তাই করল। কৌশিক জিজ্ঞাসা করল ও কলেজে কবে থেকে আসবে, চৈতালী জানালো খুব তাড়াতাড়ি।
গাড়ি চলতে শুরু করল, একটা দুটো কথার আদানপ্রদানও হল। তারপর কৌশিক ঢুলতে লাগল, একটু পরে ঘুমিয়েও পরল।

কতক্ষণ জানা নেই, তবে কৌশিকের ঘুম ভাঙল প্রচন্ড যন্ত্রণায়। চারপাশ অন্ধকার, কেউ কোথাও নেই যে কৌশিকের সাহায্য করবে। ও চিৎকার করতে লাগল অন্ধকার ফাঁকা মাঠের মধ্যিখানে শুয়ে। দু’চারটে ছেলে বিয়ারের বোতল হাতে করে মাঠে এসেছিল খাবে বলে, সাথে কিছু বাদাম ভাজা আর তন্দুরি চিকেন নিয়ে। ওরাই উদ্ধার করে অর্ধনগ্ন কৌশিককে, তারপর তাকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কিন্তু ততক্ষণে যা সর্বনাশ হবার হয়েই গেছে। ছেলের বাবা মার এখন একটাই প্রার্থনা, ছেলেটা জীবনে শুধু বেঁচে যাক।
হয়তো বেঁচে যাবে, তবে…………………

বড় ডাক্তার আসছেন!….

সবাই ভাল থাকবেন…


সৌজন্যে – প্রতিলিপি

Related News

Also Read