পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কাঁথি আদালতে এডিশনাল ডিস্ট্রিক এন্ড সেশন জজ দ্বিতীয় বিচারক শুভদীপ চৌধুরী খুনী রতন শিকদারকে সহকর্মী সাধন হালদারের হত্যার অপরাধে ভারতীয় দন্ডবিধি আইনের ৩০২ ধার মতে দোষী দোষী সাব্যস্ত করার পর আজ বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা করলেন। অপরাধী মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলার বাসিন্দা রতন শিকদার কে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা নগদ জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

জরিমানা অনাদায় অতিরিক্ত এক বছর কারাদণ্ড এর নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সাধন হালদার যেহেতু পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি এই কারণে তার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা তদন্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিবেচনা করতে বলেছেন আইনি সহায়তা কেন্দ্রকে। এই রায় পেয়ে সাধন হালদারের পরিবারের লোকেরা খুশি বলে জানাইছে। ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালে এর ২৭ নভেম্বর রাত্রি ৮ থেকে ৮’৩০ নাগাদ শংকরপুর মৎস্যবন্দরে আইস ফ্যাক্টরির পেছনে। মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থানা এলাকার কয়েকজন মৎস্যজীবী শংকরপুর এলাকায় আজমিরা ট্রলারে মৎস্য শিকারের কাজ করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় কাজের শেষে তারা সন্ধ্যায় অবসর সময় তাস খেলে কেউ বা মদ খেয়ে যে যার মত করে সময় কাটাতেন। ঘটনার দিন এই আসামি রতন মৃত ব্যক্তি সাধন ও তাদের বন্ধু বাপন এরা তিনজন মিলে তাস খেলছিল অন্যান্যদের সঙ্গে। কিছুক্ষণ পরে ওই তাসের আড্ডা থেকে এই তিনজন উঠে চলে যায় মদ্য পান করতে। মদ্যপান করে ফিরে আসার সময় রতন সাধনের কাছ থেকে তার পাওনা টাকা চাইতেই ঘটনার সূত্রপাত হয়। বাপন রতনকে বলে তুই এখন ওই টাকাটা নিয়ে কি করবি? টাকাটা নিয়ে তুই মদ খেয়ে নিবি বলায় রতন রাগান্বিত হয় এবং তার পাওনা টাকা সাধনের কাছ থেকে না পাওয়ায় এবং বাপনের মাতব্বরি তাকে আরও রাগান্বিত করে তোলে। রতন পাশে পড়ে থাকা একটি কাঠের চেরাফালি নিয়ে প্রথমে বাপনের মাথায় আঘাত করে। বাপন ভয়ে কিছুটা দূরে সরে গেলে রতন সাধনের মাথায় আঘাত করায় সাধন বরফ কলের পেছনের রাস্তায় পড়ে যায়। কিন্তু রতন ‘গজিনী’ সিনেমার নায়ক আমির খানের মত সাধনকে ভিলেনের ন্যায় একটি আঘাতের পর কিছুটা সামনের দিকে সেই চেরা কাঠের ফালিটা নিয়ে এগিয়ে গিয়ে আবার ঘুরে এসে আবার আঘাত আবার একটু এগিয়ে আবার ঘুরে এসে পরপর আঘাত করার ফলে সাধন ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। যা শংকরপুর হারবারে আইস ফ্যাক্টরিতে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সমস্ত ক্রাইম দৃশ্য আবদ্ধ হয়। ওই সময় তাদের সঙ্গে থাকা আহত বাপন রতনকে সাধনকে না মারার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও রতন তা শোনেনি। বাপন অগত্যা শংকরপুর জেটির দিকে ছুটে যায় এবং তার অন্যান্য সাথী ও আজমিরা ট্রলারের ম্যানেজারকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সবাই ছুটে আসে ঘটনাস্থলে, চিৎকার হতে থাকে। সুযোগ বুঝে রতন পালিয়ে যায়, চিৎকারের ফলে শংকরপুর মৎস্যবন্দর প্রজেক্ট এর প্রজেক্ট অফিসার বিশ্বরূপ বসু সহ তাহার অফিস স্টাফরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং মান্দারমনি থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং রতনকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্তকসরী আধিকারিক বিশ্বনাথ কয়াল ঘটনার সর জমিনে দেখা সাক্ষীগনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন তৎসহ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে ফরেন্সিক রিপোর্টের জন্য পাঠান এবং এই মামলায় তদন্ত শেষ করে রতনের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেন। এই মামলায় সরকারি আইনজীবী ছিলেন এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর মনজুর রহমান খান। মামলায় মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। আদালত রতন শিকদার কে দোষী সাব্যস্ত করার সময় কি কারণে এই আদালত দোষী সাব্যস্ত করলেন তার শুনানির সময় শুভদীপ চৌধুরী বলেন এই আদালত সাধন হালদারের খুনের স্বাক্ষ প্রমাণ স্বরূপ দুটি দিক পর্যালোচনা করেছেন, একটি হলো ঘটনাটি প্রত্যক্ষদর্শী দ্বারা দেখা আরেকটি হলো ইলেকট্রনিক্স সাক্ষ্য যেটাকে যান্ত্রিক চোখ দ্বারা দেখা বলে উল্লেখ করেছেন। পুলিশের তদন্তের ত্রুটি থাকায় যান্ত্রিক চোখ অর্থাৎ ইলেকট্রনিক্স সাক্ষ্য আদালতে প্রমাণিত না হলেও ঘটনার সময় একমাত্র চোখে দেখা সাক্ষী বাপনের সাক্ষীকে প্রত্যক্ষদর্শী এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রমাণাদি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রতনকে সাধনের হত্যার দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারা মতে দোষী সাব্যস্ত করেন বুধবার। বৃহস্পতিবার বিচারক শুভদীপ চৌধুরী রতনের সাজা ঘোষণা করেন।সরকারি আইনজীবী মঞ্জুর বাবু বলেন এ ধরনের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের জঘন্যতম অপরাধ গুলি বন্ধ হবে।





