Select Language

[gtranslate]
১লা আষাঢ়, ১৪৩২ রবিবার ( ১৫ই জুন, ২০২৫ )

ইমন নাট্যমেলা: জমে উঠেছিলো তিনদিন

    কেকা মিত্র 

ইমন মাইম দীর্ঘ দিন ধরে মাইম নিয়ে নানা গবেষণা মূলক কাজ করে চলেছেন বহু বছর ধরে।
প্রতি বছরের মতো মছলন্দপুর ইমন মাইম সেন্টার-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনের “ইমন নাট্যমেলা ২০২৫”। সংস্থাটির নিজ উদ্যোগে নির্মিত মছলন্দপুরের পদাতিক মঞ্চে ২১, ২২ ও ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত এই নাট্যমেলায় মঞ্চস্থ হয় নাটক, মূকাভিনয়, নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি, ম্যাজিক সহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও অনুষ্ঠান সূচীতে ছিল নানান সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার এবং সেমিনার। নাট্যমেলার প্রথম দিন, ২১মার্চ সকাল ১০টা থেকে অনুষ্ঠিত হয় সঙ্গীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন বিভাগে শতাধিক নানান বয়সের ছেলেমেয়েরা এই প্রতিযোগিতাগুলিতে অংশগ্রহণ করে।

সন্ধ্যায় বিশেষ অতিথিদের বরণ করে নেন ইমনের বন্ধুরা। অন্যান্য বিশিষ্টদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী গোকুল চন্দ্র দাস। এদিন ইমনের অভিনেতা, অভিভাবক ও সাংবাদিক রাসমোহন দত্ত স্মৃতি সম্মান প্রদান করা হয় তিনজন ব্যক্তিবর্গ কে। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের প্রথমেই ছিল সৃজা হাওলাদারের পরিচালনায় নৃত্যনীড়-এর নৃত্যানুষ্ঠান। তারপর মঞ্চস্থ হয় বিভিন্ন নাট্য উৎসবে সমাদৃত জীবন অধিকারী নির্দেশিত গোবরডাঙ্গা নাবিক নাট্যম-এর নাটক “নিহত শতাব্দী”। কমল মন্ডলের নির্দেশনায় মূকাভিনয় “মা” পরিবেশন করে শতকমল মাইম সোসাইটি। তারপর ছিল সঞ্চিতা মুখার্জী সেন-এর পরিচালনায় “নৃত্যালোক”-এর নৃত্যানুষ্ঠান। এদিনের শেষ মঞ্চায়ন ছিল ত্রিপুরার একলব্য নাট্যদলের যিশু দেবনাথ নির্দেশিত নাটক “ভাষান”। নাট্যমেলার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২২মার্চ সকাল থেকে ছিল অঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ২০০ বিভিন্ন বয়সের প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে এই প্রতিযোগিতাগুলিতে। দ্বিতীয় দিনে বিশ্ব মূকাভিনয় দিবসের সন্ধ্যার অনুষ্ঠান শুরু হয় অসিত আচার্য্য নির্দেশিত কাঁচরাপাড়া অঙ্গকল্পনা-র “কুবের মাঝি” এবং ইমন মাইম সেন্টারের ধীরাজ হাওলাদার নির্দেশিত “রোজনামচা” মূকাভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর পৃথা মজুমদার-এর নির্দেশনায় সপ্তসুর-এর সঙ্গীত ও চন্দনা রায়-এর পরিচালনায় ছন্দাবলী নৃত্য গোষ্ঠীর নৃত্য উপস্থাপনার পর মঞ্চস্থ হয় আশিস চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত গোবরডাঙ্গা শিল্পায়নের নাটক “তারাপ্রসন্নের কীর্তি”। তারপর ইমন ও সৌরিক আবৃত্তি শিক্ষা কেন্দ্রের বন্ধুরা সোমেন মৈত্র-র নির্দেশনায় উপস্থাপন করেন আবৃত্তি কোলাজ “কিশলয়ের সহজপাঠ” এবং মিনাক্ষী পাঠক-এর নির্দেশনায় মল্লার নৃত্যগোষ্ঠী উপস্থাপন করে নৃত্যানুষ্ঠান। এদিনের সন্ধ্যার শেষ অনুষ্ঠান ছিল নাটক “দুঃসময়”।

কর্মশালা ভিত্তিক এই নাট্য প্রযোজনায় অংশগ্রহণ করেন নাবিক নাট্যম ও ইমন মাইম সেন্টারের ৪০জন কলাকুশলী। নাটকটিতে বিশেষ সহযোগীতা করে ইমনের বন্ধু অনুপ মল্লিক এবং সমগ্র তত্ত্বাবধানে ছিলেন নাবিক নাট্যম এর জীবন অধিকারী। ইমন নাট্যমেলার তৃতীয় ও শেষ দিনের সকালে আয়োজিত হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রং ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় একটি বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। এরপর ছিল “শিশু মনস্তত্ত্ব ও থিয়েটারের সম্পর্ক” বিষয়ক সেমিনার। সেমিনারের বক্তা হিসেবে ছিলেন নাট্যসমালোচক অংশুমান ভৌমিক এবং সঞ্চালনায় ছিলেন মূকাভিনেতা মুকুল দেব। এদিন সন্ধ্যায় নাট্যমেলায় অনুষ্ঠিত নানান সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। তারপর মঞ্চস্থ হয় গৌতম অধিকারী-র ম্যাজিক, আলপনা সরকার-এর পরিচালনায় পূজা ড্যান্স একাডেমি ও শুকদেব আইচ-এর পরিচালনার নটরাজ নৃত্য গোষ্ঠীর নৃত্য এবং অন্তহীন এর কবিতা কোলাজ।

তারপর মঞ্চস্থ হয় মিনাঙ্ক ডেকা-র পরিচালনায় আসাম নির্বাক-এর মূকাভিনয়। এদিনের সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল ইমন মাইম সেন্টারের ১০১জন নানান বয়সের শিল্পীদের নিয়ে ধীরাজ হাওলাদার-এর নির্দেশনায় মূকাভিনয় “দাও ফিরে সে অরণ্য”। প্রযোজনাটিতে আবহ নির্মাণ ও সহ নির্দেশনা করেছেন জয়ন্ত সাহা এবং আলোক পরিকল্পনা করেন সুজিত বণিক। দর্শকেরা উচ্ছসিত প্রশংসায় ভরিয়ে দেন এই প্রযোজনাকে। সব মিলিয়ে ইমন নাট্যমেলা সুস্থ ও সুন্দর ব্যবস্থাপনা এবং প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হল।

Related News

Also Read

03:30