পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সৈকত শহর দিঘার বালুমাটিতে এই প্রথম প্রভু জগন্নাথের পবিত্র স্নানযাত্রা। আর তাই সারা সোযিকত শহর জুড়ে সাজো সাজো রব। আজ ১০৮টি তীর্থক্ষেত্রের জলে স্নান করবেন প্রভু জগন্নাথ দেব।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলেই বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রের পবিত্র জল এসে পৌঁছে গিয়েছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে। পবিত্র সেই সমস্ত তীর্থক্ষেত্রের জল দিয়ে আজ মন্ডপে স্নান করবেন প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। স্নানযাত্রাকে কেন্দ্র করে যেন এক আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলের সৃষ্টি হয়েছে জগন্নাথ ধাম চত্বরে। আধ্যাত্মিক ও মানসিক শান্তি বৃদ্ধির জন্য এরমধ্যে বহু দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসতে শুরু করেছেন দিঘায়।
জগন্নাথ মন্দির সূত্রে খবর, আজ সকাল নটা নাগাদ শুরু হয়েছে পাহাণ্ডি বিজয়। চলে প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে। পাহাণ্ডি বিজয়ের জন্য ইসকনের ৩০ জন সন্ন্যাসী দিঘায় এসে পৌঁছেছেন। তারাই পাহাণ্ডি বিজয়ের মাধ্যমে একে একে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে স্নান মণ্ডপের দিকে নিয়ে আসেন। ওই সময় খোল-খরতালের ধ্বনিতে ভিরে ওঠে সারা মন্দির চত্বর।
স্নানযাত্রার আগে বিগ্রহের শরীরে লাগানো হয় তুলসী। প্রথমে বের করা হয় সুদর্শন চক্র এবং পরে বলরাম, সুভদ্রা মহারানী এবং সর্বশেষে প্রভু জগন্নাথকে। মন্দিরের বামদিকে এরমধ্যে তৈরি করা হয়েছে স্নান মন্ডপ। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও গাছ-গাছালি দিয়ে অপরূপভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। দূর থেকেও দর্শনার্থীরা জগন্নাথের স্নানযাত্রা দর্শন করতে পারবেন।
স্নান মন্ডপে এগারোটা নাগাদ শুরু হয় স্নানযাত্রা। ১০৮টি তীর্থক্ষেত্রের জলের সঙ্গে মেশানো হয় কাঁচা দুধ, আতর ও চন্দন। তিনটি বিগ্রহেকে সিল্কের কাপড় দিয়ে আবৃত করে চলবে স্নানের পর্ব। সাথে সাথে চলবে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ এবং কীর্তন ও শঙ্খ ধ্বনি। স্নানের পর ১০৮টি তুলসী পাতা জগন্নাথের চরণে দেওয়া হয়। এরপর তাদের পুনরায় পাহাণ্ডী বিজয়ের মাধ্যমে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে জগন্নাথ দেব ও বলরামকে গজবেশ ও সুভদ্রা দেবীকে পদ্মবেশে সজ্জিত করা হয়। অর্পণ করা হয় গোলাপ ফুল সহ পাঁচ রকমের ফল। গজবেশ ও পদ্মবেশের পোশাক ইতিমধ্যে ইসকনের এক ভক্ত তৈরি করে জগন্নাথ মন্দিরে এনেছেন।
প্রসঙ্গত, রথযাত্রার আগে বুধবারই শেষ বারের মতো ভক্তদের মাঝে ধরা দেবেন জগন্নাথ। প্রথা অনুযায়ী স্নানযাত্রার পর জ্বর আসবে তাঁর। ফলে প্রায় এক পক্ষের জন্য লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাবেন তিনি। এরপর ১৫ দিন পর ফের জগন্নাথ সকলের সামনে আসবেন। ওই সময় চলবে অনসর পর্ব। আয়ুর্বেদিক পাঁচনে জগন্নাথ সুস্থ হয়ে আগামী ২৬ জুন তারিখ দেখা দেবেন সকলকে।
কলকাতা ইসকনের সহ-সভাপতি তথা দিঘা জগন্নাথ মন্দির ট্রাস্টের সদস্য রাধারমন দাস বলেন, যে ১৫ দিন জগন্নাথ দেব অনসর পর্যায়ে থাকবেন ওই সময় মদনমোহন জিউর দর্শন করতে পারবেন পর্যটকরা। এরপর রথের আগের দিন অর্থাৎ নেত্র উৎসবে জগন্নাথ দেবের দর্শনের সুযোগ মিলবে। স্নানযাত্রার জন্য আমরা এরমধ্যে স্নান মন্ডপ তৈরি করেছি।
অক্ষয় তৃতীয়ায় দ্বারোদ্ঘাটনের পর এ বারই প্রথম বার রথের চাকা ঘুরতে চলেছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে। তাই স্নানযাত্রা উপলক্ষেও দিঘায় সাজ সাজ রব। ইতিমধ্যে নিজের বাড়ির গাছের আম, কাঁঠাল পাঠিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ফল দিয়েই বুধবার ভোগ নিবেদন করা হবে জগন্নাথকে। এমনটাই জানিয়েছেন ইসকন কর্তা রাধারমণ দাস।