দিলীপ ঘোষ :- আমাদের বাঙালির বড় আনন্দের উৎসব এই দুর্গা পুজো। কিন্তু মা দুর্গার মুখ কখনো ভালো করে লক্ষ্য করেছেন কি? যদি লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে দেখবেন মায়ের কপালের নীচে নাকের কাছে একটা চিহ্ন আছে। কী সেই চিহ্ন আর কী বা তার অর্থ জানলে অবাক হয়ে যাবেন সকলে। আজকের এই প্রতিবেদনে সেই কথায় আলোচনা করবো।
মা দুর্গার কপাল ও নাকের মাঝামাঝি থাকা চিহ্নটি আসলে একটি উর্ণনাভ অর্থাৎ মাকড়সার চিহ্ন। ডাকের সাজের প্রতিমায় এই চিহ্ন সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে।
আসলে এই উর্ণনাভ মহামায়ার একটি প্রতীক। হ্যাঁ এটাই সত্য। হয়ত আপনারা দেখে থাকবেন যে দুর্গা পুজোর সময় বাড়িতে মাকড়সা হলে অনেক সময়ই ঠাকুমা দিদিমারা মাকড়সা তাড়াতে মানা করেন। কারণ বলা হয় মাকড়সার রূপে দেবীর আগমন হয়েছে গৃহে। কেন মাকড়সার রূপকে দেবীর রূপ বলে ধরা হয়?
ঊর্ণনাভ বা মাকড়সাকে দেবীর রূপ হিসেবে কল্পনা করার পেছনে আছে এক বিশাল তত্ত্ব। আসলে মায়ের রূপের মধ্যে এই উর্ণনাভের চিহ্নের মধ্যে দিয়ে মায়াকে চিত্রিত করা হয়েছে। দেবী যে মহামায়া তাই বোঝানো হয়েছে। মাকড়সা আসলে গভীর প্রতীকবহ একটি চিহ্ন যা মায়াকেই চিত্রিত করে।
এই মাকড়সা যেমনভাবে নিজে জাল বিস্তার করে কিন্তু নিজে সেই জাল এর মধ্যে আবদ্ধ হয় না ঠিক সেইরকম ভাবে মহামায়াও মায়ার সৃষ্টি করে চলেছেন কিন্তু মায়া সর্বদায় মহামায়ার অধীন। মহামায়া কখনোই মায়ার মধ্যে আবদ্ধ নন।
মহামায়া হলেন স্বয়ং ব্রহ্ম। যিনি মায়া বিস্তার করেছেন তিনি মায়ার মধ্যেই আছেন কিন্তু মায়ার ঊর্ধ্বে তিনি। অর্থাৎ মায়া কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনা মহামায়ার ওপর। মায়ের মুখে ঊর্ণনাভ চিহ্ন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আসলে এই মায়ার গভীর তত্ত্বকেই তুলে ধরা হয়। তাই এরপর যখন মণ্ডপে যাবেন তখন মায়ের মুখ ভালো করে দেখে উর্ণনাভের অবস্থান লক্ষ করবেন আর মা যে মহামায়া রূপে আমাদের সকলকে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন তা অনুভব করেই মাকে প্রণাম করবেন। তাহলে মায়ের কৃপা লাভ সহজ হবে।