Select Language

[gtranslate]
১২ই পৌষ, ১৪৩১ শুক্রবার ( ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ )

#সংসারের_চাবি ।।

অঙ্কিতা ঘোষ

– বৌমা, ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে আমার ঘরে একটু শুনে যেও!

– মা!

– এসো! আজ তো তোমার বৌভাত। তার আগে আমি তোমায় কয়েকটা কথা বলতে চাই।

– হ্যাঁ, মা। বলো।

– এই যে আমার আঁচলের সাথে চাবির গোছা দেখছ, এটা আমার শাশুড়িমা আমার বৌভাতের দিন দুপুরে আমার আঁচলে বেঁধে দিয়েছিলেন।

– ওহ্!

– আর আমার শাশুড়িমা পেয়েছিলেন তাঁর শাশুড়িমায়ের কাছ থেকে। বুঝতেই পারছ পরম্পরা বা উত্তরাধিকার, যাই বলো!

– বুঝেছি, মা।

– একটা জিনিস হয়তো বুঝতে পারছ না, এই চাবির গোছার ভার কতটা! চাবির গোছার সাথে এই পুরো সংসারের ভার এসে পড়েছিল আমার কাঁধে!

– হুম্।

– আমার বিয়ে হয় কুড়ি বছরে। ডাকসাইটে হেডমাস্টারের একমাত্র মেয়ে আমি। খানিকটা তোমার মতোই আদুরে, আহ্লাদি ছিলাম। কিন্তু বৌভাতের দিন এই চাবির গোছার সাথে সাথে আমার আহ্লাদ ঘুচে গিয়েছিল।

– হুম।

– এই চাবি সামলানো মানে বাড়ির প্রত্যেকের ভালো থাকা, মন্দ থাকার দায় নেওয়া। বৌভাতের পরদিন থেকে আমায় বুঝে নিতে হয়েছিল রান্নাঘর, আমিষ, নিরামিষ, সকালে দেওরদের বিদেশী ব্রেকফাস্ট; বাচ্চাদের স্কুলের গরম ভাত, মাছভাজা; সেজপিসিমার ফল চিঁড়ে; শ্বশুরমশাইয়ের ভাতের সাথে শাকভাজা, কালোজিরা ফোড়ন দিয়ে মাছ, টকদই ; শাশুড়িমার দুটো গরম রুটি আর…

– মা…

– দশটা বাজলে দুপুরের রান্না, স্নান করে গোপাল পুজো, তিনবার লক্ষ্মী পাঁচালী পাঠ, ঠিক দুপুর সাড়ে বারোটায় ভাতের হাঁড়ি চাপানো যাতে গরম ভাত খাওয়া যায় দুপুরে…

– এত কিছু!

– চাবির ভার তো কম নয়, বৌমা। দুপুরে ভাত দুটো মুখে গুঁজে পাঁপড়, বড়ি, আচারের বোয়াম ছাদে টেনে নিয়ে যাওয়া, উল্টে পাল্টে জামাকাপড় শোকানো, ছেঁড়া ফাঁটা সেলাই…

– মা!

– কি হল বৌমা? এটুকু শুনেই হাঁফিয়ে গেলে বুঝি?

– না মানে…

– শোনো হিসেব মতো এই চাবির গোছা আজ তোমার আঁচলে বাঁধার কথা! সব দায়িত্ব এবার তোমার! তাই না?

– হুম।

– কিন্তু, আজ আমি নিয়ম ভাঙব এই বাড়ির! আলমারি তে তুলে রাখছি এই চাবির গোছা! কেন বলো তো?!

– কেন মা?!

– এখন এই বাড়ির প্রত্যেকেই নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে সক্ষম। এবাড়ির ছেলেরা এখন নিজের জুতো নিজে পালিশ করতে পারে। বোতল থেকে জল নিয়ে খেতে পারে। রান্নাও ভালোই পারে।

– মা!

– আসলে আমি সেদিন এই বাড়ির সকলকে সক্ষম করার দায়িত্বটা তুলে নিয়েছিলাম, যাতে আর কাউকে কোনোদিন এই চাবির ভার নিতে নাহয়।

– মা, তুমি সত্যিই অসামান্য।

– তবে বৌমা, আমার তোমার কাছে একটা জিনিস চাওয়ার আছে।

– কি মা?

– আমার শাশুড়িমা চিরকাল আমার কাছে শাশুড়িমা হয়েই রইলেন। আমি যেন কিছুটা হলেও তোমার মা হতে পারি!

– ও মা!

সৌজন্যে – প্রতিলিপি

Related News

Also Read