Select Language

[gtranslate]
১২ই পৌষ, ১৪৩১ শুক্রবার ( ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ )

।। মধুর সম্পর্ক ।।

সুমনা মিত্র:-আজ মিঠির বিয়ে ৷ অভ্র,শুভ্র তাই আজ খুব ব্যস্ত ৷বাড়িতে প্রচুর লোকজন,আত্মীয়- স্বজন ৷ অভ্র ব্যাংকে আর শুভ্র শিক্ষক ৷ অভ্রর -শুভ্র_মিঠি কেউ কিন্তু রক্তের সম্পর্কের নয় ৷

অভ্রর বাবা অধ্যাপক ছিলেন ৷ মা অভ্র ছোটো থাকতেই মারা যায় ৷ একদিন ওর বাবার কাছে ছোটো বেলার বন্ধু বিনয় কাকু আসে ৷ বলে ,”মাধব আমি খুব অসহায় হয়ে এসেছি রে !” শুভ্রর মা অর্থাৎ মালা কাকিমার কর্কট রোগ ধরা পড়েছে ৷ ওকে সুস্থ করতে চেষ্টা করতে করতে আমি নিঃস্ব হয় যাচ্ছি রে !

বাড়ি ,জমি সব বিক্রি করেও আর শেষ রক্ষা করতে পারব বলে মনে হয় না ৷আমি একা হলে হয়তো সামলে নিতাম ,কিন্তু ছেলেটাকে নিয়ে কী করি রে ! ” বিনয় কাকু কেঁদে ফেলে ৷ অভ্রর বাবা সে সময় বলেছিলেন , “এত সমস্যা আমাকে আগে জানাস নি কেন ? আর ছেলের জন্য চিন্তা করিস না ,ও আমার কাছেই থাকবে ৷”


তখন শুভ্র ক্লাস ফাইভে আর অভ্র টুতে পড়ে ৷ সেই থেকে অভ্র শুভ্র দুই ভাই ৷ একজন অন্য জনকে চোখে হারায় ৷ তারপর একদিন মালা কাকিমা মারা যায় , আর তাঁর সেবা শুশ্রষা করতে করতে ক্লান্ত ,অবসন্ন বিনয় কাকুও খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় ৷


শুভ্র ব্যাংকে যাবার সময় একটা গাছ তলার বেদীতে একজন অন্ধ বাবার সাথে একটি চার/পাঁচ বছরের মেয়েকে দেখে ৷ মেয়েটির গানের গলা খুব সুন্দর ৷ কিছু লোক তাদের পাতা থালে কিছু খুচরো পয়সা দেয় ৷ শুভ্র প্রতিদিন দশ/বিশ টাকা দিয়ে দেয় আর ভাবে ,মেয়েটি যদি ভালো পরিবেশে থাকতো ,বহুদূর যেতে পারত ৷
কিছুদিন ধরে শুভ্র লক্ষ্য করছে ,বেদীতে কেউ নেই ৷

চার ,পাঁচ দিন পর শুভ্র সামনের দোকানে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে ,মেয়েটির বাবা মারা গেছে আর ওদের বাড়ির ঠিকানা ৷


কাজের ছুটির পরে শুভ্র একদিন পায়ে পায়ে পৌঁছে যায় মেয়েটির পাড়ায় ৷ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ,মেয়েটিকে কেউ কিছু খাওয়াতে পারছে না ৷


ওর খুব জ্বর ৷ শুভ্র আর সময় ব্যয় করে নি ৷ আ্য৷ম্বুলেন্স ডেকে ও’কে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ যদিও ওকে ওইভাবে নিয়ে যেতে দেখে প্রচুর প্রশ্ন উঠেছিল ! শুভ্র শুধু উত্তরে বলেছে ,সবার আগে আমার পরিচয় আমি মানুষ ৷ যেই কাজটা আপনাদের করা উচিত ছিল ,সেটাই আমি করছি ৷


এরপর মেয়েটির সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বাবাকে নিয়ে থানায় গিয়ে সমস্ত ফর্মালিটি পূরণ করে ওকে বোন হিসেবে নিয়ে আসে ৷

নাম দেয় মিঠি ৷ গান শিখিয়েছে ,পড়াশোনা শিখিয়েছে ৷ এখন শুভ্রর বাবা আর নেই ৷

তিন ভাই-বোন দিব্যি মিলেমিশে ভালো আছে ৷
এক অনুষ্ঠানে গাইতে গিয়েই মিঠি ডাক্তারের চোখে পড়ে যায় ৷ আজ সেই ডাক্তারের সাথেই মিঠির বিয়ে ৷

শুভ্র যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে তার নাম মহুয়া ৷ মহুয়া তো ননদিনী বলতে অজ্ঞান ৷

অভ্র আর মহুয়া খুনসুটি করছে আর মিঠির বৌভাতের তত্ত্ব সাজাচ্ছে ৷ শুভ্র এসে বলে তানপুরা’টা কিন্তু নিতে ছেড়ো না ৷ ওটাই যে আমাদের মধুর সম্পর্কের সূত্র ৷

সৌজন্যে প্রতিলিপি

Related News

Also Read