অংকিতা ঘোষ
– কাকিমা! কাকিমা আছেন?
– কে? ও মা, তুমি পাশের ফ্ল্যাটের ঐ নতুন বৌ না?
– হ্যাঁ।
– এসো এসো! ভেতরে এসে বসো গো।
– না না। আজ আর আমি বসব না। একটু দরকারে…
– দরকার তো আসবে যাবে। তোমায় আজ পেয়েছি যখন, দুটো প্রাণের গপ্পো না করে ছাড়ছি না। তা বৌমা, ফ্ল্যাট তুমি আর তোমার বরই থাকো বুঝি?
– হ্যাঁ।
– শ্বশুর -শাশুড়ি?
– ওনারা আসবেন কয়েকদিন পর।
– আচ্ছা। ক’মাস হল বিয়ের?
– চার মাস।
– প্রেমের বিয়ে?
– হ্যাঁ। ঐ আরকি!
– খুব ভালো। তা বৌমা, তুমি একটু উঁচু গলায় কথা বলো বুঝি সোয়ামীর সাথে?
– অ্যাঁ? ঠিক বুঝলাম না কাকিমা!
– না মানে, মাঝে মাঝেই তোমার গলার আওয়াজ বেশ একটু জোরেই পাওয়া যায় কিনা।
– হ্যাঁ। সংসার তো। একটু তো ঝামেলা ঝগড়া হয়ই।
– শোনো বৌমা, এখানে তো এখন তোমার শাশুড়ি নেই। আমি আছি। প্রতিবেশী কিন্তু ঐ শাশুড়ির মতোই তো আমি।
– হেহেহেহেহে।
– তোমায় কটা কথা বলি বৌমা। সোয়ামীর সাথে অত উঁচু গলায় কথা বলবে না। নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে। একটু নম্র গলায়, ধীর স্থির হয়ে, নীচু গলায় ধীরে ধীরে কথা বলবে। তাইলেই তো লক্ষ্মীমন্ত বৌ লাগবে। বুঝলে?
– হ্যাঁ হ্যাঁ। নিশ্চয়ই।
– নতুন বৌ তুমি। নীচু গলায় বরের সাথে কথা বলেই দেখো, এতে ভালোবাসা বাড়বে গো। আশেপাশের লোকও দুটো ভালো কথা বলবে।
– হেহেহে।
– আমার বিয়ের তো আজ সাঁইত্রিশ বছর হয়ে গেল। আমি আজ অবধি আমার সোয়ামীর সাথে ধীর গলায় কথা বলি। আমার শাশুড়িমা সেই বিয়ের রাতে বলে দিয়েছিলেন, বর হল দেবতা, ধীর হয়ে কথা বলতে হবে। সেই কথা আমি মেনে চলি অক্ষরে অক্ষরে। এখনও আমি কি যে নীচু গলায় তোমার কাকুর সাথে কথা বলি, সে আমি আরেকদিন বলব।
– সেকথা আর আপনাকে বলতে হবে না। কাকুই তো বলল কালকে আমায়।
– তাই?
– হ্যাঁ। আমি তো হার্টের ডাক্তার। কাকু গেছিলেন আমার চেম্বারে। আমায় বলছিলেন যে, আপনি সাঁইত্রিশ বছর চারমাস পঁয়ষট্টি দিন ধরে একনাগাড়ে এত চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলছেন কাকুর সাথে যে, কাকুর হার্ট আজকাল ধড়ফড় ধড়ফড় করে।
– হুম।
– কাকুকে আজকেই ইসিজিটা করিয়ে নিতে বলবেন আর রিপোর্টটা আমি কালকে দেখে নেব নাহয়। কেমন কাকিমা?
সৌজন্যে প্রতিলিপি