জঙ্গলমহলের দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যর্থে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে ত্রিশ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দিলেন পেনশন ভোগী অশীতিপর বৃদ্ধা প্রতিমা চক্রবর্তী।
জঙ্গলমহলের অসহায় দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যের মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এলেন পেনশনভোগী অশীতিপর বৃদ্ধা প্রতিমা চক্রবর্তী।কালের নিয়মে বয়সের ভারে তিনি নুব্জ।বার্দ্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে তিন স্বাভাবিক হাঁটাচলাও করতে পারেন না।কিন্ত তিনি দেখতে পান,শুনতে পান।অনুভবও করতে পারেন । তাই প্রবল শৈত্যপ্রবাহে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জীবন সংগ্রাম তাঁর মতো সহজ সাধারন জীবনযাপনে অভ্যস্ত গ্রাম্য মানুষের মনে দারুন ভাবে প্রভাব ফেলেছে। তাই জঙ্গলমহল এলাকার দুঃস্থ মানুষদের শীত বস্ত্র বিতরণের জন্য নিজের পেনশন একাউন্ট থেকে সঞ্চিত ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দিলেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বাঁকুড়া জেলার রানীবাঁধ শাখার অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে। প্রতিমা দেবী কর্তৃক প্রদত্ত নগদ ত্রিশ হাজার টাকা তাঁরই কনিষ্ঠ পুত্র, তথা বাঁকুড়ার কদমা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবদরদী শিক্ষক তথা ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের নয়াবসান জনকল্যাণ বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন শিক্ষক হেরম্বনাথ চক্রবর্তী সঙ্ঘের অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে তুলে দেন।অধ্যক্ষ মহারাজ জানান, ” মানব সেবায় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে l এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহনের জন্য প্রতিমা দেবীর মতো পেনশনভোগী বৃদ্ধার এই ভাবে এগিয়ে আসা দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা l “
প্রতিমা দেবীদের বাড়ি বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা থানার হাড়মাসড়া গ্রামে।তাঁর স্বামী প্রয়াত তারানন্দ চক্রবর্তী ছিলেন বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানার জাম্বনী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংস্কৃত শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক। তারানন্দ বাবু তাঁর পাণ্ডিত্যের পুরস্কার স্বরূপ ২০০১ সালের ৫ ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘জাতীয় শিক্ষক ‘ এর বিরল সম্মান l রাজ্য সরকারের কাছ থেকেও বহুবার সম্মানিত হয়েছিলেন তিনি।২০১৯ সালে কোলকাতা সংস্কৃত কলেজ ও ইউনিভার্সিটি থেকেও তারানন্দ বাবু পেয়েছিলেন বিশেষ সাম্মানিক। প্রায় একবছর আগে প্রয়াত হন তারানন্দ বাবু ।
প্রতিমা দেবী জানান, তাঁর ছেলে -মেয়েরা সকলেই প্রতিষ্ঠিত। নিজেদের সাধ্যমত তাঁরা সর্বদাই মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহন করেন। এতদিন প্রতিমা দেবী সন্তানদের পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বার্দ্ধক্য বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাড়ির বাইরে বেরোতে না পারলেও অসহায় মানুষের জন্য তাঁর প্রাণ কাঁদে। আর এই কারণেই নিজ পেনশন একাউন্ট থেকে এই যৎসামান্য সঞ্চয় তিনি জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার অসহায় মানুষদের সেবাকার্যের জন্য ছেলের মাধ্যমে সঙ্ঘের অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে তুলে দিয়েছেন।