স্বামী চেতনানন্দ :- শ্রীরামকৃষ্ণের নামাঙ্কিত সন্ন্যাসী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীরামকৃষ্ণ নিজেই। ১৮৮৬ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি তিনি তাঁর ১১ জন ত্যাগী শিষ্য ও ১ জন গৃহী শিষ্যকে গেরুয়াবস্ত্র দান করেন।
স্বামী অভেদানন্দজী তাঁর ‘আমার জীবনকথা’ গ্রন্থে এটি বিশদভাবে লিখেছেন —
পৌষ-সংক্রান্তি আগতপ্রায়। গঙ্গাসাগরের মেলা হইবে। সেইজন্য কলিকাতা জগন্নাথঘাটে বহু সন্ন্যাসীর সমাগম হইয়াছে। গোপালদাদা স্বেচ্ছায় সাধুদিগকে শীতবস্ত্র দান করিবার জন্য বারোখানি কাপড় কিনিয়া আসিয়াছিলেন এবং গেরিমাটি দিয়া ঐ কাপড়গুলি রঙ করিতেছিলেন। বারোটি মালাও সাধুদিগকে দান করিবার জন্য তিনি কিনিয়া আসিয়াছিলেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর এই সংবাদ পাইয়া মুরুব্বি গোপালদাদাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। গোপালদাদা আসিলে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গেরুয়া কাপড় কিসের জন্য করা হচ্ছে ?”

গোপালদাদা বলিলেন, “জগন্নাথের ঘাটে গঙ্গাসাগর মেলায় যাবার জন্য সাধুরা এসেছেন। আমি তাঁদের গেরুয়াবস্ত্র দান করব মনে করেছি। তারই জন্য বারোখানি কাপড় কিনে গেরিমাটিতে রঙ করেছি।”
শ্রীশ্রীঠাকুর শুনিয়া সহাস্যে বলিলেন, “জগন্নাথঘাটের সাধুদের গেরুয়া কাপড় দিলে যে ফল হবে, তার হাজার গুণ বেশি ফল হবে যদি তুই আমার এই ছেলেদের দিস ! এদের মতো ত্যাগী সাধু আর কোথায় পাবি ! এদের এক একজন হাজার সাধুর সমান। এরা হাজারী সাধু। বুঝলি ?”
My bbjo
এইকথা শুনিয়া গোপালদাদার মনোভাবের পরিবর্তন হইল। শ্রীশ্রীঠাকুর তাহার পর সেই বারোখানি গেরুয়া-বস্ত্র এবং রুদ্রাক্ষের মালা স্পর্শ ও মন্ত্রপূত করিয়া দিলেন এবং তাঁহার এগারোজন সেবককে এক – একখানি গৈরিক বস্ত্র ও একটি রুদ্রাক্ষের মালা দান করিবার জন্য মুরুব্বি গোপালদাদাকে আদেশ করিলেন।
[মতান্তরে শ্রীরামকৃষ্ণ নিজ হস্তে শিষ্যদের ঐ গেরুয়া বস্ত্র ও মালা পরাইয়া দেন।]
গোপালদাদা আমাদিগকে সেই গৈরিক বস্ত্রগুলি ও রুদ্রাক্ষের মালা পরাইয়া দিলেন। আমরা গৈরিক বস্ত্র পরিধান করিয়া শ্রীশ্রীঠাকুরকে
প্রণাম করিতে গেলাম। তিনি আমাদের সন্ন্যাসীর বেশে দেখিয়া অতিশয় আনন্দ করিতে লাগিলেন।
এগারো জন সেবক যাহারা গেরুয়া পাইয়াছিল তাহাদের নাম নরেন, রাখাল, নিরঞ্জন, বাবুরাম, শশী, শরৎ, কালী, যোগীন, লাটু, তারক ও বুড়ো গোপাল।
শ্রীশ্রীঠাকুর গিরিশ ঘোষের জন্য অবশিষ্ট একখানি গৈরিক বস্ত্র রাখিয়া দিতে বলিলেন। পরে গিরিশবাবু উহা পাইয়া মস্তকে ধারণ করিয়া কৃতকৃতার্থ হইয়াছিলেন।
