বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগের শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধাঞ্জলী
গান নিয়ে ওঁর প্যাশনটা যে কী পর্যায়ের ছিল ভাবা যায় না ,কত বার হয়েছে, রেকর্ডিং করতে বসে কখনও সুরের গমকে কেঁদে ফেলেছেন। আবার সুর আসছে না, কথা ভাল লাগছে না বলে উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় । ১৯২৯ সালের ১১ আগষ্ট কলকাতার কালিঘাটে জন্ম গ্রহন করেন এই বাঙালি সঙ্গীত শিল্পী ও সুরকার।
বাবা অতুলচন্দ্র গানবাজনা না করলেও, তাঁরই উৎসাহে দুই কাকা রত্নেশ্বর আর সিদ্ধেশ্বর গানচর্চা করতেন। ওঁরাই ছিলেন ‘মুখুজ্জে পরিবার’-এ কীর্তন, ধ্রুপদী গানের বাহক। কাকাদের সঙ্গে হরির লুঠের আসরে রূপানুরাগ, মান, মাথুর গাইতে যেতেন মানবেন্দ্র।
বাড়িতে ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, বড়ে গোলাম আলিদের আনাগোনা। জ্ঞানপ্রকাশের ডিক্সন লেনের বাড়িতে যাতায়াত, বেগম আখতার কলকাতায় এলেই হত্যে দেওয়া, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলি আকবর খান, পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ীর সংস্পর্শে আসা, সেতারবাদক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুতা— সব মিলিয়ে সুরের রামধনুতে যাঁর চলাচল, তাঁর রঙের খেলা যে বহুগামী হবে এ আর বিচিত্র কী!
গানের জন্য এক দিকে আবেগী। অন্য দিকে বেপরোয়া। নাছোড়। সে একেবারে ছোট থেকেই।
স্বয়ং কাজি নজরুল ইসলাম নাকি মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যাকে দুটি গান শিখিয়েছিলেন। গানদুটি ছিল ‘সখী সাজায় রাখ লো পুষ্পবাসর’ এবং ‘হে মাধব হে মাধব’। নিজের জীবনে প্রচুর নজরুলগীতি রেকর্ডও করেছেন মানবেন্দ্র।
গায়ক মানবেন্দ্রর পাশাপাশি সুরকার মানবেন্দ্রর খ্যাতিও কিছু কম ছিল না।বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলা গান চমৎকারিত্বের উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছায় এবং সে-কারণে সেই সময়কালকে “বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগ বলা হয়”। ১৯৫০-এর দশকেই মানবেন্দ্র বাংলা গানের মর্যাদাকে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের উচ্চতায় তুলে দেন। তার স্বতন্ত্র কণ্ঠের কারণে দর্শকদের কাছে তিনি হিট ছিলেন।
মাত্র ৬১বছর বয়সে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি অমৃতলোকে যাত্রা করেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
রেখে যান তাঁর সুরের জাদু,যা আজও বাঙালীর মনকে নাড়া দিয়ে যায় বারবার।মহান এই সংগীত শিল্পী ও সুরকারকে এখন সংবাদ পরিবার জানায় শত কোটি প্রণাম