স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ
দেবী দুর্গার অপর নাম অপরাজিতা |উপনিষদে দেবী অপরাজিতাকে ব্রহ্মার পুরী, বৈকুণ্ঠ বা বাসস্থানের নাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে |
দেবী অপরাজিতা সর্ববিঘ্নবিনাশিনী ও সর্বকামপ্রদায়িনী |দূর্গাপূজার ষষ্ঠী আদি কল্প থেকে নবমী পর্যন্ত পূজা করে দশমীতিথিতে দেবীকে জলে স্থাপন বা বিসর্জনের পর কুলাচার অর্থাৎ কুলপ্রথা অনুসারে অপরাজিতার পূজা করতে হয় |
দুর্গাপূজায় সকল প্রকার দোষ ত্রুটি দূর করার জন্য ও বিজয় কামনায় এই অপরাজিতার পুজো করতে হয় |অপরাজিতা রূদ্রলতা ” করোতু বিজয়ং মম ” মন্ত্রে প্রণাম করে বিজয় প্রার্থনা করতে হয় |এরপর দেবীকে মন্ত্রসহ প্রদক্ষিণ করে ধারণমন্ত্রে দক্ষিণ বাহুতে ঐ অপরাজিতা লতা বাঁধবার নিয়ম আছে |
দশমীতে একটি পাত্রে অপরাজিতা লতা রেখে তাতে দেবী দুর্গার আবাহন ও অর্চনা করা হয় | পুজোর শেষে ঐ অপরাজিতা লতা টুকরো টুকরো করে কেটে শ্বেতসর্ষপ ও হরিদ্রার সঙ্গে হরিদ্রারঞ্জিত কাপড়ে ছোট ছোট পুঁটুলিতে বাঁধা হয় এবং হরিদ্রা বর্ণ সুতো দ্বারা প্রত্যেকের দক্ষিণ বাহুতে বেঁধে দেওয়া হয় |
কালিকাপুরাণোক্ত দুর্গাপূজায় বিজয়া দশমীকৃতে দেখা যায় দেবীর বিজয়ার পর সকলের ডান হাতে শ্বেত অপরাজিতা লতা বাঁধবার প্রথা আছে | এরপর ” ওঁ নিমজ্জাম্ভসি সম্পূজ্য পত্রিকা বর্জিত জলে,পুত্রায়ুর্ধবৃদ্ধর্থং স্থাপিতাসি জলে ময়া ” মন্ত্রে দেবীকে জলে স্থাপন করতে হয় |
তারপর জলক্রীড়া, মঙ্গলাচরণ, কলসের শান্তিবারি দান ও ডানহাতে শ্বেত অপরাজিতা লতা বন্ধন করারও নিয়ম দেখা যায় |তাছাড়া বৃহন্নন্দিকেশ্বর , কালিকাপুরান ও মৈথিলী শ্রীদূর্গাভক্তিতরঙ্গিনীর মতে নব পত্রিকার অনুষ্ঠানেও বিঘ্ন দূর করার জন্য অপরাজিতা লতার ব্যবহার দেখা যায় |