ইন্দ্রজিৎ আইচ
ভাবতে অবাক লাগে আমাদের একশ চুয়াল্লিশ কোটি জনসংখ্যার দেশে জন্মহার ক্রমশ কমে যাচ্ছে। আর আমাদের রাজ্যে এই সংখ্যাটা জাতীয় জন্মহারের থেকে কম! বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এই সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে অনায়াসেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে শহর কলকাতায় ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশন (ISAR, Bengal) – এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বন্ধ্যাত্বের যাবতীয় অত্যাধুনিক চিকিৎসা নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলন East India Fertility Conclave 2025। তিন দিন ব্যাপী এই সম্মেলনে দেশের প্রথম সারির প্রায় পাঁচশ বন্ধ্যাত্ব ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ গ্রহণ করেন। ডা. সুদীপ বসু, ডা. দিব্যেন্দু ব্যানার্জি, ডা. সুপর্ণা ভট্টাচার্য, ডা. ঐন্দ্রী সান্যাল, ডা. এস এম রহমানের মতো শহরের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চেন্নাইএর ডা. এস সুরেশ, ডা. প্রমথেশ দাশ মহাপাত্র বা হায়দ্রাবাদের ডা. এস বৈজয়ন্তির মতো আন্তর্জাতিকখ্যাতি সম্পন্ন চিকিৎসকেরাও।

সংস্থার পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ডা. সুদীপ বসু জানান অনুষ্ঠানের প্রথম দিন শহরের বিভিন্ন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা কেন্দ্রে এই চিকিৎসার বিভিন্ন দিক নিয়ে তরুণ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিতে এগারটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিনে সম্মেলনের বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে অন্যতম প্রধান আকর্ষন ছিল ডা. এস সুরেশের কমল কুমার দাস স্মারক বক্তৃতা। এরপরে বৈদ্যনাথ চক্রবর্তি স্মারক বক্তৃতা দেন ডা. প্রমথেশ দাস মহাপাত্র। ‘সোস্যাল মিডিয়া ডাক্তার বাবুদের কাছে আশীর্বাদ না অভিশাপ’ এই বিষয়ক একটি অত্যন্ত আকর্ষক আলোচনাচক্রের সঞ্চালনা করেন ডা. কুণাল সরকার। এই আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
আমাদের দেশে প্রায় ২ কোটি ৭৫ লক্ষ দম্পতি বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন। নারী পুরুষ দুপক্ষেরই এই বন্ধ্যাত্বের কারণ বিশ্লেষণ করতে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক পেলভিক আলট্রাসাউন্ড, ফার্টিলিটি স্ক্যান, থ্রি-ডি টুলস, ওভারিয়ান প্যাথলজি সহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে এই সম্মেলনে কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন অংশের নামী ফার্টিলিটি ফিজিশিয়ানরা সবিস্তার আলোচনা করেন। এই আলোচনায় আগামী দিনে সন্তান ইচ্ছুক দম্পতিকে আশার আলো দেখাতে অনেক নতুন নতুন তথ্য উঠে আসে। উপস্থিত চিকিতসক, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা তাঁদের গবেষণা ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ভাগ করে নেন।
সন্তানহীন দম্পতির জেনেটিক কোড বিশ্লেষণ করে বন্ধ্যাত্বের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা গেলে চিকিৎসায় ভাল ফল আশা করা যাবে বলে জানালেন ডা. দিব্যেন্দু ব্যানার্জি। আইভিএফ পদ্ধতিতে ভ্রূণ উৎপাদনের পরে হবু মায়ের শরীরে নানান সমস্যা দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি এবং যথযথ ব্যবস্থা না নেওয়া মিসক্যারেজের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা, এই বিষয়টির চিকিৎসার উপরেও আলোকপাত করেন। এখানেই জানা গেল অতি সম্প্রতি বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় AI –এর ব্যবহার এবং সন্তান ধারণ সুগম করতে প্রোবায়োটিক ব্যবহার নিয়ে নতুন গবেষণাও শুরু হয়েছে।
ক্যানসারের চিকিৎসা করালে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর গুণগত মাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভ্রূণ সৃষ্টিতে সমস্যা হয়, এক্ষেত্রে ফার্টিলিটি প্রিজার্ভেশন সম্পর্কে সচেতনতা জরুরী। কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির আগে ডিম্বাণু / শুক্রাণু সংগ্রহ করে হিমায়িত করে রাখলে পরবর্তী কালে আইভিএফ এর সাহায্যে সন্তান উৎপাদন অনেক সহজ হয়ে ওঠে। হায়দ্রাবাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এস বৈজয়ন্তী জানান সম্প্রতি তাঁরা নয় দশ বছরের ক্যানসার আক্রান্ত বাচ্চার অপুষ্ট শুক্রাণু বা ডিম্বাণুও সংরক্ষণ করছেন। পরবর্তি কালে বিশেষ প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত করে এইগুলি ব্যবহার করা যাবে। আইভিএফ এর খরচ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় অনেকের সন্তানের আকাঙ্খা পূরণ হয় না। এই কনফারেন্সে এজন্য চিকিৎসকেরা স্বল্প মুল্যে আইভিএফ চিকিৎসাকে সাধারণের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। আশা করা যায় আগামী দিনে সন্তানহীন দম্পতির মুখে হাসি ফোটাতে East India Fertility Conclave 2025 এর আলোচনা এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।





