Select Language

[gtranslate]
২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বৃহস্পতিবার ( ১৩ই মার্চ, ২০২৫ )

ভারতের অন্যতম রূপকার স্যার এম বিশ্বেশ্বরায়াকে শতকোটি প্রণাম।

সুস্মিত মিশ্র :- তিনি ভারতের অন্যতম রূপকার ।মাত্র তেইশ বছর বয়সে চাকরি জীবনের প্রথম থেকেই নিয়েছেন চ্যালেঞ্জ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খরস্রোতা পাঞ্জেরা নদীর গতি পরিবর্তন কিংবা হায়দরাবাদের বন্যা প্রতিরোধ, সবেতেই সাফল্য পেয়েছেন এই কিংবদন্তি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।তাঁর সম্মানেই তাঁর জন্ম দিনটি ‘জাতীয় ইঞ্জিনিয়ার দিবস’ নামে পরিচিত।



১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর বৃটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের বর্তমানে কর্নাটক রাজ্যের চিক্কাবল্লপুর জেলার  মুদ্দেনাহাল্লিতে এক তেলুগু ব্রাহ্মণ পরিবারে  জন্মগ্রহণ করেন স্যার মোক্ষগুন্ডম বিশ্বেশ্বরায়া।পিতা মোক্ষগুন্ডম শ্রীনিবাসা ছিলেন প্রাচীন সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত  ও মাতা বিজয়ালক্ষ্মী আম্মা। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের মোক্ষগুন্ডম গ্রামে। ছোটবেলায় তার পিতার মৃত্যু হয়।  বহু কষ্টে নিজের চেষ্টায় তিনি রাস্তার আলোয় বসে পড়াশোনা করেছেন। ৬০ কিলোমিটারের পথ পায়ে হেঁটে  ব্যাঙ্গালোরের  ইউনাইটেড মিশনারি স্কুলে যেতেন। শহরের বিভিন্ন মন্দিরের প্রসাদেই দিন কাটাতেন।স্কুলের  পাঠ শেষে ভর্তি হন মহারাষ্ট্রের পুনে অবস্থিত বর্তমানে সাবিত্রীবাই ফুলে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এশিয়ার তৃতীয় প্রাচীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। প্রথম স্থান অধিকার করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তেইশ বৎসর বয়সে।


লড়াকু মানসিকতার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এম বিশ্বেশ্বরাইয়া।তিনি দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলে সেচের জন্য  এক জটিল পদ্ধতির সূচনা করেন এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে পুনের নিকটস্থ খড়কভাসলা বাঁধের জন্য পরিকল্পনাসহ ও স্বয়ংক্রিয়  প্লাবণক্ষেত্রে জলদ্বার নির্মাণ করেন। এখানে সফলতা পাওয়ার পর একই ডিজাইন ও পদ্ধতিতে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে তিগরা বাঁধ এবং মহীশূরের কৃষ্ণ রাজা সাগর বাঁধের নির্মাণ সম্পন্ন করান।

কর্মক্ষেত্রে অসামান্য দক্ষতার জন্য তৎকালীন ভারত সরকারের সৌজন্যে  তিনি  ইয়েমেনের  অ্যাডেন শহরে যাওয়ার সুযোগ পান এবং সেখানে অ্যাডেনের ওয়াটার সাপ্লাই এবং ড্রেনেজ সিস্টেম সম্পর্কে পড়াশোনা করেন। অ্যাডেনের প্রকল্পটির সার্থক রূপায়ণ করেন হায়দ্রাবাদ  শহরে বন্যা হতে সুরক্ষার ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করার পর তিনি বহু সুনাম অর্জন করেন। বিশাখাপত্তনম  বন্দরকে সমুদ্রের ক্ষয় থেকে রক্ষা করতেও পদ্ধতির পরিকল্পনা করেন। বিহারে গঙ্গা নদীর উপর মোকামা ব্রীজটিও তার প্রযুক্তিগত পরামর্শে নির্মিত হয়েছে।



মহীশূর রাজ্যের দেওয়ান থাকাকালীন বেসরকারি বিনিয়োগে শিল্পস্থাপনে উৎসাহিত করেছেন। তিরুমালা হতে তিরুপতি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনাতে তিনি মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন।বিশ্বেশ্বরায়া নিজের কাজে সবসময় ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক, সঠিক সময়ে নিষ্পাদনে অবিচল এবং নিবেদিত প্রাণ। ব্যাঙ্গালোর প্রেস এবং ব্যাঙ্ক অব মাইশোর তার সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কন্নড় ভাষার প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। তিনি কন্নড় ভাষার উন্নতির জন্য কন্নড় পরিষদ গঠন করেন।



১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্যাঙ্গালোরে সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ  স্থাপনায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে এটি ইউনিভার্সিটি বিশ্বেশ্বরায়া কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং নামাঙ্কিত হয়।অনেক রেলপথের মাধ্যমে মহীশূর রাজ্যের যোগাযোগের পথ সুগম করেন।

তাঁর ভাবনাচিন্তার কথা তিনি লেখেন ‘আ প্ল্যানড ইকোনমি ফর ইন্ডিয়া’ বইয়ে। দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর কার্যত তিনিই প্রথম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটির, পরে নানা কারণে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে নিজের পদ ছেড়ে দেন। ১৯৫৫ সালে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গেই তিনি ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত হন।

ভারতবাসীর প্রতি বিশ্বেশ্বরাইয়ার আহ্বান ছিল ‘শিল্পায়ন অথবা ধ্বংস’। তিনি ছিলেন এক জন মহান যন্ত্রবিদ, দক্ষ প্রশাসক ও দূরদর্শী রাষ্ট্রনেতা। ১৯৬২ সালের ১২ এপ্রিল, ১০২ বছর বয়সে এম বিশ্বেশ্বরাইয়ার মৃত্যু হয়।

“কর্মই ধর্ম” কে অনুসরণ করে চলতেন বিশ্বেশ্বরায়া। শিক্ষা এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরক্ষেত্রে যে অবদান সারা জীবনে রেখে গেছেন আজও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করে সারা দেশ।


হে ভারতের অন্যতম রূপকার আপনার ১৬৪তম জন্ম দিবসে এখন সংবাদ পরিবার নতমস্তকে আপনাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে

Related News