নামিরা নূর নিদ্রা :- “আমি যখন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তখনই আমি আমার সতিত্ব হারিয়েছি আমার ফুফাতো ভাইয়ের দ্বারা! খুব বাজেভাবে সে আমাকে ভোগ করেছে। আমি চেয়েও তাকে আটকাতে পারিনি।”
সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনে থমকে যায় আদিন। বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে বসে নাইলা আবারো বলে ওঠে,
“আপনাকে বিয়ের আগেই সব বলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে। জানেন, আমার পরিবার নিজেদের মানসম্মানের কথা ভেবে আমাকে প্রতিবাদ করতে দেয়নি। আমি ছোট থেকেই নিজেকে আড়ালে আড়ালে রাখতাম। ভাইয়াকে কখনো অন্য নজরে দেখিনি। কিন্তু ভাইয়া হয়তো বরাবরই আমাকে বাজে নজরে দেখেছে। আমার নিজের কোনো বড়ো ভাই নেই। তাকে নিজের বড়ো ভাইয়ের চোখে দেখতাম। আর সেই ভাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো। বিশ্বাস করুন, আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি নিজেকে বাঁচানোর। তবে একটা ছেলের সাথে পেরে উঠিনি।”
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলে থেমে যায় নাইলা। আদিন এখনো এক দৃষ্টে নাইলার দিকে তাকিয়ে আছে। সে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। নাইলা আদিনের দিকে তাকিয়ে কৃত্রিম হেসে বলে,
“ঘৃণা হচ্ছে আমাকে দেখে তাই না? জানি, সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর থেকে এমন কিছু শুনবেন তা আশা করেননি। কী করব বলুন? মিথ্যা নিয়ে কিংবা কিছু লুকিয়ে যে নতুন জীবন শুরু করতে চাই না। আপনি চাইলে আমাকে বের করে দিতেই পারেন। বলতেই পারেন যে আমার মত মেয়ের সাথে সংসার করবেন না। আমি আপত্তি করব না। শুধু একটা অনুরোধ, এসব আমার পরিবারকে জানাবেন না। আপনি আমাকে স্ত্রীর অধিকার নাই বা দিলেন। আমাকে গ্রহণ করতে হবে না আপনার।”
“কী হয়েছিল? একদম শুরু থেকে সবটা শুনতে চাই আমি।”
আদিনের এমন কথায় নাইলা অবাক হয়ে বলে,
“শুনতে চান সব?”
“হ্যা।”
“শুনুন তবে। সেদিন ছিল শনিবার। আমার ফুফাতো ভাই আমাদের বাসায় ঘুরতে এসেছিল। মধ্য রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ঠিক সেই সময় আমার ঘরের দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনতে পাই আমি। দরজা খুলে দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। এত রাতে সে কেন এসেছে আমার ঘরে এটা জিজ্ঞেস করতেই সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আমি ভয় পেয়ে যাই। চিৎকার করতে গেলে ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে বলে, সে নাকি আমাকে অনেক দিন ধরে পছন্দ করে। আমাকে ছোঁয়ার ইচ্ছে তাকে পাগল করে দিচ্ছে। আমি এসব শুনে হতভম্ব হয়ে যাই। কিন্তু কিছি বলতে পারি না।”
“কেন?”
আদিনের প্রশ্নে চোখে পানি টলমল করে নাইলার। সেই কালো রাতের কথা মনে করে বিছানার চাদর খামচে ধরে সে।
“কারণ ততক্ষণে ভাইয়া আমার মুখে রুমাল আটকে দেয়। বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার উপর উঠে বসে সে। অল্প বয়সী আমি কী আর তার মত বলিষ্ঠ দেহের কারোর সাথে পেরে উঠতে পারি? আমার আত্ম চিৎকার সেদিন কারোর কানে পৌঁছায়নি। ভাইয়া বলে যাকে ডাকতাম সে নিজের চাহিদা মিটিয়ে উঠে গেল। আমার সতিত্ব সেদিনই শেষ! পরদিন আমার ঘরে আমাকে এলোমেলো অবস্থায় দেখে মায়ের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে আমার সাথে ঠিক কি হয়েছে। মা বাবাকে এসব জানালে আমাদের চুপ থাকতে বলে। এসব বাইরের মানুষ জানলে ছিঃ ছিঃ করবে। সমাজ আমাকে মেনে নিবে না। আর সব জানাজানি হলে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে। সেখানে আমি কখনো সুখী হতে পারব না। আরো কত রকমের কথা বলে বাবা আমাকে আর মা’কে চুপ করিয়ে রাখল। আমাকে প্রতিবাদ করতে দিলো না। তবে হ্যা, বাবা ওই শয়তানের আমাদের বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিলো। কিন্তু তাতে কী? আমার যা সর্বনাশ হওয়ার সেটা তো হয়েই গিয়েছে ততক্ষণে।”
আচমকা আদিন নাইলাকে বুকের মধ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়। নাইলা কিছু বুঝে উঠতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,
“কী করছেন?”
“শোনো মেয়ে, তোমার সাথে যা হয়েছে তাতে তোমার কোনো হাত নেই। তুমি পরিস্থিতির শিকার। কেন নিজেকে অপবিত্র মনে করছ তুমি? তোমার মত নিষ্পাপ চাহুনির মেয়ে আমি দ্বিতীয় আর একটা দেখিনি। তোমার পরিবার চুপ থেকে ভুল করেছে। সেই ভুল আমি করব না।”
“কী করবেন আপনি?”
“যে অন্যায় করেছে তাকে শাস্তি পেতে হবে।”
“শাস্তি আর সে? হাহ্! সে এখন নিজের বউকে নিয়ে খুব সুখে আছে।”
“মনে রাখবে, যে অন্যায় করে তার শাস্তি একদিন হবেই। আর যেখানে তুমি কোনো দোষ করোনি সেখানে নিজেকে দ্বায়ী করবে না। আমি তোমাকে এসব জানার আগেও যেমন নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি, এসব জানার পরেও বলছি আমি তোমাকে আমার স্ত্রী হওয়ার পূর্ণ সম্মান দিব। সব পুরুষ কাপুরুষ হয় না বুঝলে? যাকে বিয়ে করেছি তাকে এত সহজে ছেড়ে দিই কীভাবে?”
কথাগুলো বলে আদিন নাইলার চোখের পানি আলতো হাতে মুছে দেয়। এতগুলো দিন পর ভরসার একটা কাঁধ পেয়ে, বিশ্বাস করার মতো একজন মানুষকে পেয়ে নাইলা যেন শান্তির নিশ্বাস নেয়। সবকিছুর পরেও কোথাও যেন তার মনে হয়, সে ভালো নেই। ভালো থাকতে পারছে না তার অতীত মনে করে। অতীত কী সত্যিই ভোলা যায়? নাকি চিরকাল অতীতের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়!
